নিজস্ব প্রতিনিধি, পীরগঞ্জ: ধর্মান্ধতার আগুন সব কিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে। অপরাধ না করেও শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার অপরাধেই চরম শাস্তি পেতে হয়েছে পীরগঞ্জের হতদরিদ্র জেলেপাড়ার বাসিন্দারা। এবার আর তাঁদের পোড়া ঘরে ধন দেবী লক্ষ্মীর আরাধনাই হল না। লক্ষ্মীপুজোর দিনে ওঁদের ঘরে নেমে এসেছে চরম অন্ধকার।
অথচ এমনটা হওয়ার কথাই ছিল না।
দুর্গাপুজো শেষেই হিন্দুদের ঘরে ঘরে হয় লক্ষ্মীপুজো। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, কোজাগরি পূর্ণিমার রাতে দেবী লক্ষ্মী সংসারকে ধনধান্যে ভরিয়ে দিতে পুজো গ্রহণ করতে আসেন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা বেজে পাঁচ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমা তিথি। বুধবার রাত আটটা ২৭ মিনিটে শেষ হবে তিথি। অন্যদের মতো প্রতি বছরই লক্ষ্মীপুজো নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি নিতেন পীরগঞ্জের জেলেপাড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। চোখের সামনে পুড়ে খাঁক হয়ে গিয়েছে সব কিছু। তাই লক্ষ্মীপুজোর দিনে মন খারাপ সুদর্শন দাস, নন্দরানী দাসদের। অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভেবে দু চোখের পাতা এক করতে পারছেন না।
আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো নন্দরানী দাসের পুজোর আগের রাত কেটেছে প্রশাসনের দেওয়া তাঁবুর নিচে। বিষাদভরা কণ্ঠে বললেন, ‘বাড়িতে প্রতিবছর লক্ষ্মীপুজো হতো। এখন যে অবস্থায় আছি তাতে ইচ্ছা থাকলেও পুজোর আয়োজন করা সম্ভব হবে না।’ ঘটনার দিন বাড়িতে হামলার পাশাপাশি মৎস্যজীবী জগদীশ চন্দ্র দাসের ৪টি গরু লুট করে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই মুহূর্তে পুজো আয়োজনের চেয়ে গরুগুলো আদৌ ফেরত পাবেন কিনা- সেই চিন্তাতেই মগ্ন জগদীশ দাস। আর এক বাসিন্দা সুদর্শন দাস আতঙ্কিত কণ্ঠে বললেন, ‘পুজো তো বছরে একবারই আসে। এ নিয়ে কত আয়োজন থাকে! কিন্তু এবার লক্ষ্মীপুজো কীভাবে হবে বুঝতে পারছি না। এখন পুলিশ আমাদের পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর কী হবে, তা ভেবেই পাচ্ছি না।’ দুষ্কৃতীদের দেওয়া আগুনে সুদর্শন দাসের ২টি গরু পুড়ে মারা গেছে। তার মধ্যে একটা গরুর দাম উঠেছিল ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেটা তখন বিক্রি করেননি তিনি। এখন হাত কামড়াচ্ছেন। মনে করছেন, তখন বিক্রি করলে ভাল হতো। হাতে নগদ কিছু থাকত।
পীরগঞ্জের জেলেপাড়ায় যখন লক্ষ্মীপুজোর ধুপধুনোর গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ানোর কথা, তখন শুধু বাতাসে পোড়া গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছু হতদরিদ্র মানুষের কপাল পোরারও গন্ধ বোধ হয়।