নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: কথায় বলে ঠ্যালার নাম বাবাজি। মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোয় সালিশি সভা বসিয়ে পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছিলেন গ্রামের মোড়লরা। সংবাদমাধ্যমে এমন অমানবিক বিষয়টি প্রকাশিত হতেই চাপের মুখে পিছু হঠলেন তাঁরা। সামাজিক বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার পাশাপাশি দুর্ভোগের মুখে পড়া পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাই চৌধুরীর মেয়ে ঝর্ণা চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। মহিলাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে সওয়াল করায় স্থানীয় মোড়লদের রোষের শিকার হন। সামাজিক মাধ্যমে ঝর্ণার নামে ব্যক্তিগত কুৎসাও শুরু হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা চলে যান তিনি। তাতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মোড়লরা। আমেরিকায় অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে নানা কুৎসা প্রচার করা হয়। ঝর্ণা এক ভিনধর্মীকে বিয়ে করেছেন এই অভিযোগ তুলে স্থানীয় মসজিদ কমিটি সালিশি সভা বসিয়ে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়।’
একবিংশ শতাব্দীতে এসে এমন অমানবিক ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই হইচই পড়ে যায়। মঙ্গলবার রাতেই ঝর্ণার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন উপজেলা নির্বাহী আধিকারিক এটিএম ফরহাদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া থানার ওসি বিনয়ভূষণ দেব, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বৈঠকে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়া জানান, ‘এলাকায় রটে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় যাওয়া ঝর্ণা একটি হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছেন। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঝর্ণার বাবাকে সালিশি সভায় ডাকা হয়। কিন্তু গ্রামের বিশিষ্টজনদের নিয়ে ডাকা বৈঠক এড়িয়ে যান তিনি। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঝর্ণার পরিবার নিজেদের মতো করে চলুক। গ্রামের অন্য বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে চলবেন।’
কিন্তু ঝর্ণা কোনও হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেনি বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তার পরেই ভুল বুঝতে পেরে ঝর্ণার বাবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মসজিদ কমিটির পদাধিকারীরা। সেই সঙ্গে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন কিছু ঘটাবেন না।’ সমস্যার সমাধান হওয়ায় খুশি ঝর্ণার বাবা আবদুল হাই চৌধুরী।