নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁচল: কালীপুজোর প্রবর্তন নিয়ে কাহিনীর অভাব নেই এই বাংলায়। বেশিরভাগ কালীপুজোই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ডাকাতদের হাত ধরে। কিছু পুজো তৎকালীন রাজা-বাদশা কিংবা জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতাতেও সূচনা হয়েছিল। কিন্তু বিদেশিদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজোর প্রবর্তন! সেই ইতিহাসই বহন করে চলেছে মালদহের চাঁচল থানার দক্ষিণা কালী। ব্রিটিশ আমলের এই পুজোর বর্তমানে দায়ভার তুলে নিয়েছেন মহিলারা। মালদহের চাঁচলের থানার কালী পুজো যা এখন চাঁচল থানা মহিলা আবাসন পুজো বলেই পরিচিত।
কথিত আছে, চাঁচল থেকে দু’ কিলোমিটার দূরত্বে ঘরবাড়িতে এই পুজোর প্রথম প্রচলন হয়। ব্রিটিশদের হাত ধরেই এই পুজোর সূচনা হয় খরবা থানায়। পরে ওই থানার অবলুপ্তি ঘটে চাঁচল থানা হয়। ১৯৭২ সালে এই পুজোও চাঁচল থানায় সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেই সময় নাকি মা-এর বেদি সরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হইনি। নানা ধরনের অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে হয়েছে সে সময়। আর তাই দীপান্বিতা অমাবস্যায় এখনও প্রথমে খরবা ফাঁড়িতে মায়ের আরাধনা হয়। তারপর শক্তিদায়িনীর পুজো হয় চাঁচল থানায়। এই ভাবে দশকের পর দশক ধরে শক্তির আরাধনা করে আসছেন মহিলা আবাসন কমিটি। এ বছর করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে পুজোর জোর প্রস্তুতি।
প্রতিবছর জাকজমক ভাবেই এই পুজো হয়ে আসছে। এবারেও খামতি রাখতে চান না উদ্যোক্তারা। তাই এখন থেকেই সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গণ সাজিয়ে তোলা হচ্ছে শক্তি আরাধনার জন্য। আগামী ৪ নভেম্বর কালীপুজো। হাতে মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। ইতিমধ্যে পুজোকে ঘিরে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। গোটা মন্দিরে চড়ছে রঙের প্রলেপ। এছাড়াও মন্দির-সহ গোটা থানা প্রাঙ্গণে লাগানো হচ্ছে রঙবাহারি টুনি বাল্ব, শুরু হয়েছে প্যান্ডেলও। চাঁচল থানার পুজোতে শহর ছাড়াও গ্রামগঞ্জ থেকে বহু মানুষের সমাগম ঘটে।
চাঁচল থানার অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড আনন্দ কুমার দত্ত জানান, ‘যতদূর জানি চাঁচলের খরবা ফাঁড়ির পুজো ব্রিটিশ আমলের। ১৯৭২ সালের ১৫ মে এই পুজো চাঁচল থানার সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। প্রতিবছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় খরবা ফাঁড়িতে মায়ের আরাধনা শেষ করে চাচল থানায় শক্তিদায়িনীর পুজো হয়। বর্তমানে পুজোর ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন মহিলারা। তারাই পুজো পরিচালনা করেন। এবছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা জাঁকজমক ভাবে এই পুজোয় ব্রতী হতে চলেছি।’