নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলার কালী পূজার সঙ্গে ডাকাতের যোগ বহু প্রাচীন একটি বিষয়। কলকাতাও ছিল তার অন্তর্ভুক্ত। কলকাতার বিভিন্ন স্থানে আজও খোঁজ নিলে সেই পুরানো ডাকাতে কালী পূজার ইতিহাস মেলে। কলকাতার চিত্তেশ্বর কালীমন্দিরের নেপথ্যে রয়েছে তেমনই এক ঘটনা। জানা যায় চিত্রপুর নামক এক জঙ্গলাকীর্ণ গ্রামে বাস করতেন চিত্তেশ্বর নামে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত। এই স্থান বর্তমান চিৎপুর নামে পরিচিত। সেই ডাকাত চিতে নামেও পরিচিত ছিল । এক নিম গাছের গুঁড়ি থেকে সে একটি দেবী প্রতিমা তৈরি করে। তান্ত্রিক মতে পূজার্চনা শুরু করে এবং তার নাম অনুসারেই দেবীর নাম হয় চিত্তেশ্বরী।
বর্তমানে কলকাতার কাশিপুর গান এন্ড শেল কারখানার পাশে এই মন্দির অবস্থিত হলেও জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রাচীন কলকাতার চিৎপুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন চিত্তেশ্বরী। জানা যায়, চিতে ডাকাতের মৃত্যুর পর দেবি মূর্তিটি মাটির তলায় সমাধিস্থ করা হয়েছিলি। কথিত আছে তাঁর মৃত্যুর পর বহুদিন যাবৎ নাকি মূর্তিটি অবহেলায় কোনও পূজা না পেয়ে পড়েছিল। পরবর্তীকালে নৃসিংহ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক সেই মাতৃমূর্তি ভূগর্ভ থেকে উদ্ধার করে সেখানে পুনরায় মন্দির স্থাপন করেন এবং পূজা শুরু করেন।
শেওড়াফুলি রাজবংশের রানী সেই নৃসিংহ ব্রহ্মচারীর অনেক অলৌকিকত্বের পরিচয় পেয়ে দেবী চিত্তেশ্বরী নামে ওই স্থানের অনেক সম্পত্তি দেবোত্তর করে দেন এবং তাকে পূজারী নিযুক্ত করেন। বলাবাহুল্য সেই ব্রহ্মচারী উপাধি এই মন্দিরের পূজারীরা আজও ব্যবহার করে আসছেন। এই চিত্তেশ্বরী দেবীমূর্তি হলো সিংহবাহিনী দুর্গা মূর্তি। দেবীমূর্তির সঙ্গে অন্যান্য দেবদেবী অনুপস্থিত। পাশেই রয়েছে একটি বাঘের মূর্তি। জানা যায়, এই বাঘের মূর্তিটি সুন্দরবনের ব্যাঘ্র দেবতা দক্ষিণরায়ের দ্যোতক।
সেই সময়ে সুন্দরবন বিস্তৃত ছিল কলকাতার দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে। এই অঞ্চলও ছিল তার অন্তর্ভুক্ত। বাঘের উপদ্রব ছিল এই স্থানে অহরহ। চিত্তেশ্বরী দেবীর পূজার আগে এই বাঘের দেবতার পূজা করার প্রাচীন রীতি এখনও এখানে লক্ষণীয়। প্রাচীন দেবীমূর্তির নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা হলেও আদি মন্দিরটি কোন গাছ বা পর্ণকুটিরে ছিল বলেই ধারণা। বর্তমান মন্দিরের পিছন দিকে একটি ছোট্ট বাগানের মধ্যে সেই তান্ত্রিক ব্রহ্মচারী প্রতিষ্ঠিত পঞ্চমুন্ডির আসন এখনও রয়েছে বলে জানা যায়।