নিজস্ব প্রতিনিধিঃ উমার পর মর্ত্যে শ্যামার আগমন। দীপাবলির উৎসবে আলোয় আলোয় সেজে ওঠে চারিদিক। এদিন সব স্থানের কালীমন্দিরগুলিতে বছরের অন্যান্য দিনগুলির থেকে তুলনায় বেশি মানুষের আগমন ঘটে। সঙ্গে নতুন করে সেজে ওঠে মন্দিরপ্রাঙ্গনগুলি নতুনভাবে। সেরকমই এক কালীমন্দির হল কলকাতার বুকে বউবাজারে অবস্থিত ‘ফিরিঙ্গি কালী মন্দির’। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী মন্দিরটি ৫০০ বছরের পুরানো এক কালীমন্দির। এই মন্দিরের সবথেকে বড় ইতিহাস হল মন্দিরের সঙ্গে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির যোগসূত্র। যা আপামর বাঙালিকে স্তম্ভিত করে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যখন ধর্মের ধ্বজাধারীরা ধর্মের বুলি আওড়ান আর রক্তগঙ্গা বইয়ে দেন সাম্প্রদায়িকতাকে শ্রীখণ্ডী করে। তখন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির কালীভক্তি সত্যিই এই সময়ে দাঁড়িয়েও এক বেনজির বিষয় বলা যায়।
বর্তমান কলকাতার বউবাজার এলাকায় অবস্থিত ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি, বাইরে বড় বড় হরফে লেখা ‘ফিরিঙ্গি কালীমন্দির’ ফলকে লেখা ‘শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির’। কথিত নাম ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এই মন্দিরে আসতেন বলে তাঁর সঙ্গে এই মন্দিরের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। কলকাতা তখনও ‘মেট্রোপলিটন সিটি’ বা ‘সিটি অব জয়’ হয়ে ওঠেনি। তখন ওই এলাকা ছিল ভাগীরথী নদী থেকে কিছু খাল দিয়ে পরিবেষ্টিত অরণ্যসঙ্কুল এলাকা। মন্দিরে তখনও কালীপুজো হত না। সেখানে পাতার ছাউনিতে ছিল শিব ও শীতলার মন্দির। পরে ভাগীরথী নদীর অদূরে এক শ্মশানের মধ্যে মাটির কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এই কালি মন্দিরের সঠিক প্রতিষ্ঠাকাল জানা যায় না। তবে মন্দিরের গায়ে খোদাই করা সময় অর্থাৎ’৯০৫ বঙ্গাব্দ’ থেকে অনুমান করা হয় যে এই মন্দিরটি ওই সময়েই প্রতিষ্ঠিত। ১৮৮০ সালে এই মন্দিরের তৎকালীন পুরোহিত শ্রীমন্ত পণ্ডিত পুজো করতেন। পরবর্তীকালে তিনি ৬০ টাকার বিনিময়ে এই মন্দির দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে বিক্রি করে দেন পোলবার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারকে। বর্তমানে সেই পরিবারই এই মন্দিরের সেবায়েত।
তবে মন্দির প্রতিষ্ঠার পর সেখানে হিন্দুধর্মের প্রতি বিশেষ আগ্রহী কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এখানে নিয়মিত যেতেন। তিনিই প্রথম ইউরোপীয় যিনি বাংলা ভাষার কবিয়াল। জানা যায় ওই মন্দিরের দেখাশোনার ভার ছিল বিধবা এক মহিলা প্রমীলা দেবীর ওপর সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হন অ্যান্টনি। পরে লোকমুখে এই মন্দিরের নাম ‘ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি’ বলেই পরিচিত হয়েছে। এই মন্দিরে মায়ের মূর্তিটি পাঁচ ফুট লম্বা ও সবসনা ত্রিনয়নী মূর্তি। কালী মূর্তি ছাড়াও এই মন্দিরে আছে শিব, শীতলা, মনসা ও দুর্গা, ও নারায়ণের মূর্তি। মন্দিরে প্রতি অমাবস্যায় কালীপুজো অ প্রতি পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পূজা হয়।