নিজস্ব প্রতিনিধি: ভূত চতুর্দশী পালিত হয় কালীপুজোর (KALI PUJA) ঠিক আগের দিন। এই ভূত চতুর্দশী’র (BHOOT CHATURDASHI) কত নাম- নরক চতুর্দশী, রূপ চতুর্দশী, রূপ চৌদাস, যম চতুর্দশী এবং ছোট দীপাবলি। এই বছর ভূত চতুর্দশী’র তিথি থাকছে ২৩ অক্টোবর। আগামী ২৪ অক্টোবর কালীপুজো। তবে ওই দিনও থাকছে ভূত চতুর্দশী তিথি!
কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালন করা হয় ভূত চতুর্দশী। চলতি বছরে এই তিথি পড়েছে ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিট থেকে। আর তিথি শেষ হচ্ছে ২৪ অক্টোবর বিকেল ৫টা ২৮ মিনিটে। তবে উদয় তিথি মেনে তা পালিত হবে ২৪ অক্টোবর।
ভূত চতুর্দশীতে কালী (KALI) ঠাকুরের বিশেষ পুজোও করা হয়। ২৩ অক্টোবর রাত্রি ১১টা ৪৬ থেকে ৫১ মিনিট দেবীর আরাধনা করার সময়। পুজোর সেই সময় থাকছে ২৪ অক্টোবর রাত্রি ১২টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত।
পুরাণ অনুযায়ী এই দিন দেবী চামুণ্ডা ১৪টি ভূত এবং প্রেত নিয়ে মর্ত্যে আসেন অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য। আবার অনেকের বিশ্বাস, এই সময়ে পূর্ব পুরুষদের আত্মা (চৌদ্দ পুরুষ) মর্ত্যলোকে আসেন। তাঁদের শান্তি কামনা করা হয়।
এই দিন অসুর রাজ বলি’র পুজোও করা হয়! অবাক হচ্ছেন? দৈত্যরাজের পুজো কেন? এর পেছনে রয়েছে একটি কাহিনী। পুরাণ অনুযায়ী, অসুর রাজ বলি দখল করে নিয়েছিলেন স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতাল- এই ত্রিলোক। সেই সময় বিষ্ণু ‘বামন’ অবতার ধারণ করেন। এরপরে তিনি ব্রাহ্মণ বামন হয়ে দৈত্যরাজের কাছে দান চান তিন পা জমি। অসুররাজ রাজি হয়েছিলেন। তবে তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন এই বামন আসলে দেব বিষ্ণু। তবু নিজের কথা থেকে ফিরে আসেননি বলি। এরপরে বামন ধারন করেছিলেন বিশাল রূপ। এক পা এক পা করে তিনি পা ফেলেছিলেন স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতালে। পায়ের চাপে বলি’কে প্রেরণ করেছিলেন পাতালে। উল্লেখ্য, দৈত্যরাজ বলি ‘অমর’। ফিরে আসা যাক, বিষ্ণু বামন এবং বলি’র কথায়। যেহেতু অসুররাজ চিনতে পারার পরেও বামন অবতারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি’র খেলাপ করেননি, তাই বিষ্ণুর বরে তিনি এই দিন পুজো পান। তাঁর সঙ্গে আসেন প্রেত-ভূত।
এই দিনে, ১৪টি শাক একত্রে ধোয়া হয়। এই শাকগুলি, নিম, কেও, ওল, কালকাসুন্দা, শালিঞ্চা, বেতো, সরিষা, পলতা, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, হিঞ্চে, শেলু, ঘেঁটু, শুষনি। সমস্ত শাক একসঙ্গে ধুয়ে বাড়ির সমস্ত কোনে ছেটানো হয় এই দিন। মনে করা হয় এতে অশুভ শক্তি দূরে থাকে। এরপরে ১৪টি শাক ভেজে খাওয়া হয়। অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে এদিন বাড়িতে জ্বালানো হয় ১৪টি বাতি।
অকাল মৃত্যু যাতে না হয়, তাই ভূত চতুর্দশী’র দিনে জ্বালানো হয় যমের নামে প্রদীপ। এই প্রদীপ মাটির নয়, ময়দার। সেই প্রদীপ চারমুখী। মানে নির্দেশ করে চারটি দিক। কেন এই প্রথা? পুরাণ অনুযায়ী, একদিন যম তাঁর দূতদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন, কারও প্রাণ নেওয়ার সময় তাঁদের (যমদূত)দের কষ্ট হয় কি না। তাঁরা প্রথমে দ্বিধা নিয়ে ‘না’ বললেও। পরে একটি কাহিনী বলেন। যাতে বিচলিত হয়েছিলেন স্বয়ং যমরাজ।
হেম রাজার পুত্রের জন্মের পরে জ্যোতিষদের ভবিষ্যৎ গণনা ছিল, বিয়ের ঠিক চারদিনের দিন মৃত্যু হবে রাজপুত্রের। তারপরে রাজা তাঁর পুত্রকে যমুনা নদীর তিরে একটি গুহায় রেখে তাঁকে ব্রহ্মচারী হিসেবে বড় করতে শুরু করেছিলেন। একদিন সেই গুহার সামনেই ভ্রমণ করছিলেন রাজা হংসের কন্যা। রাজপুত্র এবং রাজকন্যা বিয়ে করেছিলেন গান্ধর্ব মতে। বিয়ের চারদিনের দিনে মৃত্যু হয়েছিল রাজপুত্রের। তখন নববধূ’র হৃদয় বিদারক কান্নার সময় কেঁদেছিলেন যমদূতরাও।
এই ঘটনা শুনেই যমরাজ বলেছিলেন, ভূত চতুর্দশীর দিনে দীপ জ্বালালে অকাল মৃত্যু হয় না। অন্য কাহিনীও প্রচলিত আছে। সেখানে কিন্তু প্রাণে বেঁচেছিলেন রাজপুত্র। আর প্রাণরক্ষা হয়েছিল নববধূর জন্যই।
রাজা হিমার পুত্রের বিয়ের চারদিনের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হবে সর্পদংশনে, ভবিষ্যৎবানী ছিল এমনটাই। তা জানতে পেরে নববধূ তাঁর স্বামীকে সেই দিন জাগিয়ে রেখেছিলেন। স্বামীকে স্ত্রী জাগিয়ে রেখেছিলেন গান ও গল্প শুনিয়ে। আর তাঁদের শয়নকক্ষের বাইরে জমা করে রেখেছিলেন সোনা এবং রূপোর অলঙ্কার, মুদ্রা। ছিল দীপ। যম তাঁদের ঘরের কাছে এলে প্রচুর সোনা, রূপো আর আলোতে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, হিমার পুত্রবধূর গল্প ও গান শুনতে শুনতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ফলে রাজপুত্রের আর প্রাণ নেওয়া হলো না। আর এদিকে সেই দিনও পেরিয়ে গেল। যম এরপরে প্রস্থান করেছিলেন। আর রাজপুত্রের প্রাণরক্ষা হওয়ায় অভিশপ্ত দিনের পরের দিনে পালিত হয়েছিল ধনতেরাস (DHANTERAS)।
আরও পড়ুন: সামনে কালীপুজো, জানেন কি অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি আসলে কে ছিলেন?