নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: দেশসেবা ছিল স্বামীর কাছে পরম ধর্ম। শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো লাদাখ সীমান্ত আগলে রেখেছিলেন সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক দীপক সিং। গত ২০২০ সালের জুনে গালওয়ানে চিনা লালফৌজের অতর্কিত হামলায় আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। দেশ রক্ষা করতে গিয়ে স্বামীর শহিদ হওয়ার পরেই দীপক সিংয়ের বিধবা স্ত্রী রেখা সিং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দেশরক্ষার কাজে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন তিনি। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হল। রেখা সিংকে লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিয়োগ করল ভারতীয় সেনা। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে চেন্নাইয়ে অবস্থিত সেনা আকাদেমিতে বিশেষ প্রশিক্ষণের পরেই সেনা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
বিয়ের মাত্র ১৫ মাসের মধ্যেই স্বামী দীপক সিংকে হারিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের রেওয়া জেলার বাসিন্দা রেখা সিং। ২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ানে চিনের লালফৌজের হাতে প্রাণ খোয়াতে হয়েছিল ভারতীয় সেনার বাহাদুর ল্যান্সনায়েককে। স্বামীকে হারিয়ে কার্যত অথৈ জলে পড়েছিলেন রেখা। কিন্তু সাহস হারাননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ‘স্বামীর স্বপ্নপূরণ করতে সেনায় যোগ দেবেন। শত্রুদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে প্রয়োজনে স্বামীর মতোই আত্মবলিদান দেবেন।’ পরিবারের অনেক সদস্য-ই ঝুঁকির জীবন বেছে নিতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু কারও কথা শোনেননি দীপক-পত্নী।
কেন সেনায় যোগ, কেনই বা ঝুঁকির জীবন বেছে নেওয়া? স্বামীর ছবি আঁকড়ে ধরে বজ্র-কঠিন কণ্ঠে রেখা বললেন, ‘স্বামীর দেশভক্তি আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। দীপকের মৃত্যুর পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, শিকক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিয়ে সেনায় যোগ দেব। কাজটা সহজ ছিল না। প্রথম দফায় সফল হইনি। কিন্তু হার মানি নি। বরং নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত সফলতা পেয়েছি। লেফটেন্যান্ট পদে নিয়োগ পেয়েছি। আগামী ২৮ মে থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এক বছর বাদে সেনা সদস্য হিসেবে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারব। শত্রুকে রুখতে গিয়ে যদি মরেও যাই, কোনও দুঃখ থাকবে না।’