এই মুহূর্তে




বিদ্যা বালন ডিনারের আমন্ত্রণে সাড়া না দেওয়ায় শুটিং আটকে দিয়েছিলেন মন্ত্রী বিজয় শাহ




নিজস্ব প্রতিনিধি, মধ্যপ্রদেশ: মধ্যপ্রদেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রী বিজয় শাহ আবারও সৃষ্টি করেছেন বিতর্কের। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে তাঁর অবমাননাকর মন্তব্য রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঝড় তুলেছে। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, বিজয় শাহ তাঁর বিতর্কিত বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডের কারণে বহুবার আলোচনায় এসেছেন। হরসুদ থেকে নয়বারের বিধায়ক এবং পাঁচবারের মন্ত্রী শাহের বিতর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তাঁর কর্মকাণ্ড বারবার প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

২০১০: সন্তের সমাধিতে রাশিয়ান ব্যালে নৃত্য আলোড়ন সৃষ্টি করে

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খান্ডোয়া জেলার হরসুদ বিধানসভা কেন্দ্রের মালগাঁওয়ে নিমারের প্রসিদ্ধ সাধক দাতা সাহেবের সমাধিতে আয়োজিত এক মেলায় বিজয় শাহ বিতর্কের জন্ম দেন। এই মেলার অনুষ্ঠানগুলি গ্রামীণ সংস্কৃতি অনুসারে আয়োজন করা হত। কিন্তু তৎকালীন মন্ত্রী বিজয় শাহ বলিউড এবং রাশিয়ান ব্যালে নৃত্যশিল্পীদের অন্তর্ভূক্ত করে এতে ‘অশ্লীলতা’ ঘটান বলে অভিযোগ।

স্থানীয় জনগণ, বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। বিরোধিতা এতটাই বেড়ে যায় যে শাহের মন্ত্রীত্ব যাই যাই হয়। শেষ পর্যন্ত দলের প্রবীন নেতাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চেয়ার বাঁচান বিজয় শাহ।

২০২০: বিদ্যা বালন ডিনারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলে শাহ ‘শেরনি’র শুটিং বন্ধ করে দেন

সেই সময় শাহ মধ্যপ্রদেশ সরকারের বনমন্ত্রী ছিলেন বিজয় শাহ। অভিনেত্রী বিদ্যা বালন তখন ‘শেরনি’ ছবির শুটিং করছেন। তাঁর শুটিং চলছিল মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট জেলার জঙ্গলে। অভিযোগ, বিজয় শাহ বিদ্যাকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু অভিনেত্রী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরের দিনই দেখা যায় তার ফলাফল। ক্রুদের গাড়িকে শুটিংয়ের জন্য পরদিন আর জঙ্গলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে ইউনিটকে প্রভূত সমস্যার সম্মুখীন হয়।

যদিও শাহের দাবি ছিল, বিদ্যা বালন নিজেই তাঁকে লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই তা নাকচ করে দেন। তবে বিবিধ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে যে শুটিং পারমিট বাতিলের সিদ্ধান্তটি শাহের নির্দেশে নেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনা তার ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন করে।

২০১৩: শিবরাজের স্ত্রীর উপর মন্তব্য, মন্ত্রী পদ হারানো

২০১৩ সালে বিজয় শাহ উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। খান্ডোয়ায় একটি অনুষ্ঠানের সময়, তিনি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের স্ত্রী সাধনা সিং সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। এই বক্তব্য বিজেপির ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক হৈ চৈ’র সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ শাহকে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয়। যদিও কিছু সময় পরে তাকে মন্ত্রিসভায় পুনর্বহাল করা হয়েছিল। এই ঘটনা বিজয় শাহ’র ভাবমূর্তির স্থায়ী ক্ষতি করে।

ঝাবুয়ায় টি-শার্ট বিতর্ক: মেয়েদের উপর অশালীন মন্তব্য।

ঝাবুয়ায় একটি অনুষ্ঠানে মেয়েদের টি-শার্ট বিতরণের সময় আপত্তিকর মন্তব্য করেন বিজয় শাহ। মেয়েদের দিকে ইশারা করে তিনি বলেছিলেন, “ওদের দুটো করে দাও, আমি জানি না ওরা নিচে কী পরে।” এই বক্তব্যের জন্য শাহকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই বক্তব্যকে মহিলাদের প্রতি অসংবেদনশীল এবং অশালীন বলে অভিহিত করা হয়েছিল।

২০২৩: সাতপুরা টাইগার রিজার্ভে চিকেন পার্টি

২০২৩ সালে বিজয় শাহের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। তাতে দেখা যাচ্ছিল তিনি সাতপুরা টাইগার রিজার্ভের মূল এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে চিকেন-ডাল-বাটি পার্টি করতে দেখা গিয়েছিল। নর্মদাপুরম জেলার রোরিঘাট সিদ্ধ বাবা পাহাড়ে এই অনুষ্ঠানটি ঘটেছিল, যেখানে বন বিভাগের কর্মীরা আগুন জ্বালিয়ে খাবার রান্না করেছিলেন। বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনের অধীনে সংরক্ষিত এলাকায় আগুন জ্বালানো এবং পার্টি করা বেআইনি।

আরটিআই কর্মী অজয় ​​দুবে এই বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন। তার পর শুরু হয় তদন্ত। দুবে অভিযোগ করেছেন যে শাহ এবং তাঁর দল একটি নিষিদ্ধ এলাকায় একটি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন। তারপর সেখানেই নিজেদের গাড়ি পার্ক করেছিলেন। আর তা বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন করেছিল। তদন্তের সময় জানা যায় যে বনকর্মীরা এই পার্টির আয়োজন করেছিলেন। তবে সাতপুরা টাইগার রিজার্ভের ডিরেক্টর বলেন, কোনও বন্য পাখি মারা হয়নি। কর্মীরা বাজার থেকে মুরগি কিনে এনেছিলেন। ফলত, এই মামলায় কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।

২০২৫: কর্নেল সোফিয়া কুরেশির উপর অবমাননাকর মন্তব্য।

সম্প্রতি, ইন্দোর জেলার মাহুতে এক অনুষ্ঠানে বিজয় শাহ কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘জঙ্গিদের বোন’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। এই বক্তব্য কেবল সেনাবাহিনীকে অপমান করেনি, বরং দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এটিকে “বিপজ্জনক” এবং “অশ্লীল ভাষা” বলে অভিহিত করে এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫২, ১৯৬(১)(বি) এবং ১৯৭(১)(সি) ধারার অধীনে বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেয়। এই ঘটনার পর শাহ ক্ষমা চেয়ে দাবি করেন যে তিনি তাঁর বোনের থেকেও কুরেশিকে বেশি সম্মান করেন।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

‘সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন’, কর্মীদের চিঠি টাটা চেয়ারম্যানের

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জ্বলছে ধুবড়ি, দেখামাত্রই গুলি চালানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত বোয়িং ড্রিমলাইনার বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হবে, এল ডিজিসিএর কড়া নির্দেশ

চলন্ত এক্সপ্রেসে নাবালিকাকে যৌন ইঙ্গিত, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মাটিতে ফেলে পেটালেন যাত্রীরা

দু’দিন আগেই রাঙা হয়েছিল সিঁথি, বিমান দুর্ঘটনায় মুছল নববধূর সিঁদুর

পাল্টা হামলা চালাবে ইরান, আগেভাগেই সতর্ক হচ্ছে ইজরায়েল

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ