নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশে বেশ কিছু রাজ্যের হাইকোর্টে এবং সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল সমলিঙ্গের বিয়ের(Same Sex Marriage) আর্জি জানিয়ে জন বিশেক মামলা। সেই সব মামলা একযোগে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)। কিন্তু এই বিষয়ে প্রথম থেকেই তীব্র আপত্তি জানিয়ে এসেছে গেরুয়া ব্রিগেড। কেননা সমলিঙ্গের বিবাহ নাকি দেশের চিরন্তন পারিবারিক ধারনার বিরোধী। যদিও কেন্দ্রের সেই আপত্তিকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এই ক্ষেত্রে দ্রুত ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে মামলাগুলি সংবিধান বেঞ্চে(Constitution Bench) পাঠিয়ে দেয়। আগামিকাল থেকেই সেই মামলার শুনানি শুরু হতে চলেছে সুপ্রিম কোর্টে। ঠিক তার আগে এদিন কেন্দ্রের(Modi Government) তরফে এই শুনানি ও বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে ফের নয়া হলফনামা(Affidavit) জমা দেওয়া হয়েছে এদিন। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কেন্দ্রের বিরোধ যে তুঙ্গে উঠেছে সেটাও সামনে চলে এসেছে।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া, বন্ধ বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়
সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই সমলিঙ্গের বিবাহের আর্জিতে দায়ের মামলার শুনানির জন্য ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হয়েছে। যে ৫জন বিচারপতিকে নিয়ে এই সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হয়েছে তাঁরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এস কে কল, বিচারপতি রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি পি এস নরসিংহ। আগামিকাল থেকেই তাঁরা এই মামলার শুনানি শুরু করবেন। মনে করা হচ্ছে খুব জোর ৫টি দিন বরাদ্দ হতে পারে এই শুনানির জন্য। সেই হিসাবে আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যেই গোটা বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ফায়সলা হয়ে যাবে। কিন্তু এই মামলার শুনানি ও সুপ্রিম কোর্ট কেন এই মামলা খারিজ করছে না, কেন এই মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চ অবধি টেনে নিয়ে চলে গেল তা নিয়ে এখনও তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে চলেছে মোদি সরকার। সেই সঙ্গে তাঁরা এই বিষয়ে তীব্র বিরোধিতাও করে চলেছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র যত বিরোধিতাই করুক না কেন আগামিকাল নির্দিষ্ট সময়েই মামলার শুনানি শুরু হবে।
আরও পড়ুন একা নন জীবন, জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে আরও ১২ বিধায়কের নাম
এদিন কেন্দ্রের তরফে নয়া যে হলফনামা সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত মৌলিক অধিকারের মধ্যে সমলিঙ্গের বিবাহের স্বীকৃতি অন্তর্ভুক্ত নয়। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা বা তা নিয়ে আইন প্রণয়ন করা তাকে স্বীকৃতি দেওয়া এইসবই সংসদ ও কেন্দ্রের সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিচারবিভাগ এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সেটা তাঁদের এক্তিয়ারের মধ্যেও পড়ে না। দেশে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিয়ে ও পরিবার নিয়ে একটা ধারনা আছে। সেখানে একজন পুরুষ ও মহিলার বিবাহের বিষয়টিই প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে পরিবার গড়ে ওঠার বিষয়টি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু সমলিঙ্গের বিবাহ সম্পূর্ণ ভাবে পাশ্চাত্য সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়। তাকে মামলার মাধ্যমে দেশের সনাতন সমাজে জোর করে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। করা উচিতও নয়। এই ধরনের প্রচেষ্টা দেশের প্রতিটি নাগরিককে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। তাঁদের মানসিক ভাবে ধাক্কা দেবে।
আরও পড়ুন ১ সপ্তাহে খাস কলকাতায় পাকড়াও ১২ হাজার হেলমেটহীন বাইকচালক
এদিন কেন্দ্রের দাখিল করা হলফনামায় আরও জানানো হয়েছে যে, বিয়ে এমন একটা বিষয় যে তার সঙ্গে গ্রামীণ, আধা গ্রামীন এবং শহরের মানসিকতা ভিন্ন ভিন্ন। দেশে বিয়ে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন আইনও রয়েছে। সেখানে এই ধরনের বিয়ের কোনও স্থান ও স্বীকৃতি নেই। আদালত এই বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দিলে প্রচলিত আইনগুলি ধাক্কা খাবে। গোটা বিষয়টি দেশের ক্ষতিসাধন করব। তাই সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ তাঁরা যেন এই বিষয়টি সংসদের হাতেই ছেড়ে দেয়। আদালত এই নিয়ে যেন কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়। সমলিঙ্গের মানুষদের অধিকার সম্পর্কের স্বীকৃতি, সেই স্বীকৃতির আইনি অধিকার এই সব কিছু দেখা ও তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র দেশের সংসদ। সংবিধানের সপ্তম তপশিলের ৩ নম্বর তালিকার পঞ্চম স্থানে এই বিষয়ে সংসদকে পূর্ণ অধিকার দেওয়া আছে। সুপ্রিম কোর্ট সেই ধারাও লঙ্ঘণ করছে। সমলিঙ্গের বিয়ের বৈধতা বা স্বীকৃতির দাবি কখনই মৌলিক অধিকার হতে পারে না।