নিজস্ব প্রতিনিধি: মহারানী ভিক্টোরিয়ার সরকার সমকামকে বিদ্ধ করেছিল ‘অপরাধ’ তকমায়। সেটা ছিল পরাধীন ভারতের ছবি। আর স্বাধীন ভারতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের চূড়ান্ত অবমাননা ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা RSS জানিয়ে দিল সমকাম(Homosexuality) নাকি ‘রোগ’। সঙ্ঘের মহিলা শাখা রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি সম্প্রতি(Survey) এক সমীক্ষা করিয়েছে। সেটাও মাত্র ৩১৮জনকে নিয়ে। কী সেই সমীক্ষা? না সমকাম স্বাভাবিক নাকি কোনও রোগ। সেই সমীক্ষায় ৩০০’র বেশি মানুষ নাকি জানিয়েছেন, সমকাম হল একটা রোগ। গল্প শুধু এখানেই থেমে নেই। এই সমীক্ষার ফলকে তুলে ধরে এখন সঙ্ঘের মহিলা শাখার তরফে দাবি করা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court) সমলিঙ্গের বিয়ের(Same Sex Marriage) ছাড়পত্র দিলে তা দেশের পক্ষে, সমাজের পক্ষে চূড়ান্ত হানিকর হয়ে দাঁড়াবে। কেননা সেক্ষেত্রে সমাজে সমকামের প্রবণতা বাড়বে ও সেই সংক্রান্ত অপরাধও বাড়বে।
আরও পড়ুন আবারও ২ লক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ, নজরে PMGAY
বাংলায় একটা কথা আছে ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’। দেশ ও সমাজের সেই মোড়ল হয়ে ওঠার এখন চেষ্টা করছে RSS। তাঁরাই ঠিক করে দেবে কে কি কাপড় পড়বে, কে কি খাবে, কে কোন ভাষায় কথা বলবে, কে কাকে বিয়ে করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ সঙ্ঘকে দায়িত্ব দেয়নি সমকাম রোগ না মানসিকতা সেটা খুঁজে বার করতে। নিজেরাই আগ বাড়িয়ে নেমে পড়েছে ঢাক ঢোল পেটাতে। সেই কারণেই ‘নকল সমীক্ষা’র অবতারণা। শুধু তাই নয় সেই সমীক্ষা তুলে ধরে আবার দাবি করা হচ্ছে, বহু চিকিৎসক এবং চিকিৎসা দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন সমকাম আসলে এক ধরনের রোগ বা বিকার। আর সমকাম বিবাহ আইনি স্বীকৃতি পেলে সমাজে এই প্রবণতা আরও বাড়বে। রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসা এবং আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত ৩১৮ জনকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। আর সেখানেই দাবি করা হয়েছে, সমকাম আসলে একটি বিকার। সমকাম বিবাহে যদি আইনি সিলমোহর পড়ে, সেক্ষেত্রে এই রোগ সমাজের বুকে বাড়তেই থাকবে। অর্থাৎ সমকাম বিবাহে সবুজ সংকেত দেওয়ার অর্থ এই প্রবণতায় ইন্ধন জোগানো।
আরও পড়ুন ১ বছরে, ৩০০ কৃষকবন্ধু উপভোক্তার মৃত্যু ময়নায়, বিস্ফোরক রিপোর্ট
তাঁদের সমীক্ষায় নাকি উঠে এসেছে যে ৭০ শতাংশ চিকিৎসকই নাকি জানিয়েছেন সমকাম আসলে একটি রোগ। অন্যদিকে ৮৩ শতাংশ দাবি করেছে, সমকামী যুগলদের শারীরিক সম্পর্ক থেকেই নানা ধরনের যৌন রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। তাই এই বিকারকে আইনি সিলমোহর দেওয়া মানে এই রোগে উসকানি দেওয়া। এর পরেও যদি সমকাম বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে এই রোগে আক্রান্তদের সুস্থ করার থেকে, তাঁদের আরও অসুস্থ করে তোলা হবে। তাই বিকার দূর করতে কাউন্সেলিংই সেরা উপায়। আসলে এই সব করা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে সমলিঙ্গের বিয়ের আর্জি যাতে কোনও ভাবেই ছাড়পত্র না পেয়ে যায় সেই কারণে। যদিও এই সব করে যে সুপ্রিম কোর্টকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না সেটা দেশের তাবড় তাবড় আইনজীবীরা জানিয়েও দিচ্ছেন। তাঁরা একযোগেই জানিয়েছেন, সমলিঙ্গের বিয়ের ছাড়পত্র দেওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্রা। গেরুয়া শিবির থেকে যাই দাবি করা হোক না কেন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ সেই সব পাত্তাও দেবে না। বরঞ্চ তাঁদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ ২০১৮ সালেই এক ঐতিহাসিক রায় দিয়ে সমকামকে ‘অপরাধ’-র তকমা মুক্ত করেছে। সেই রায়কে মাথায় না রেখেই যেভাবে RSS’র তরফে সমীক্ষা করা হচ্ছে ও তার ফল ঢাক পিটিয়ে প্রচার করা হচ্ছে তা আদতে সেই সুপ্রিম রায়েরই অবমাননা।