নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপির বুথ সভাপতির খুনের ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার তমলুক সদর মহকুমার ময়না(Moyna) ব্লক যখন রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে ঠিক তখনই সেই ময়না নিয়েই উঠে এল এক বিস্ফোরক তথ্য ও রিপোর্ট। জানা গিয়েছে গত ১ বছরে ময়না ব্লকে ৬০ বছরের নীচে ৩০০জন কৃষকবন্ধু(Krishak Bandhu) উপভোক্তার মৃত্যু হয়েছে। আর সেই সূত্রে তাঁদের পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা করে মোট ৬ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছে রাজ্যের কৃষিদফতর। তবে কী কারণে এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ব্লকে এতজন কৃষকের(Farmers) মৃত্যুর ঘটনা ঘটল তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata BAnerjee)। আর সেই তদন্তেই উঠে এল বিস্ফোরক তথ্য। ময়না ব্লক কৃষিদফতরের তদন্তে উঠে এসেছে, মৃত ৩০০জন কৃষকের মধ্যে ৬০ ভাগ হৃদরোগে(Stroke) ও ৪০ ভাগ ক্যান্সারে(Cancer) আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। বয়স ৬০-এর কোঠায় পৌঁছনোর আগেই তাঁরা মারা গিয়েছেন।
আরও পড়ুন আবারও ২ লক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ, নজরে PMGAY
সব থেকে বড় কথা এই রিপোর্ট যে তথ্য তুলে ধরেছে তা শুধু সেখানকার কৃষকদের কাছেই উদ্বেগজনক তাই নয়, গোটা ময়না ব্লকের বাসিন্দাদের কাছেও যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের জেরে মৃতদের তালিকা ও মৃত্যুর কারণ নিয়ে সমীক্ষা করেছিল ময়না ব্লক কৃষিদফতর। তাতেই স্পষ্ট ওই ব্লকে ক্যান্সার ও হৃদরোগের হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আর সেই প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে রাসায়নিক প্রয়োগের ঘটনা। ময়না ব্লকে ৬৪ হাজার কৃষকবন্ধু উপভোক্তা আছেন। সরকারিভাবে কৃষিজমির পরিমাণ ১১ হাজার ৪০০ হেক্টর। কিন্তু, বাস্তবে অর্ধেক জমিতেও ধান চাষ হয় না। কারণ, জলা জমি কেটে ভেড়ি করে নেওয়া হয়েছে। অথচ ভূমির চরিত্র বদল হয়নি। ময়নায় ধান চাষের পরিমাণ একেবারে কমে গিয়েছে। অথচ গোটা জেলার মধ্যে এই ব্লকেই সবচেয়ে বেশি কৃষকবন্ধু উপভোক্তা আছেন। বিঘার পর বিঘা জমি কেটে ভেড়ি বানিয়ে মাছ চাষ হচ্ছে। আবার, সেই জমি থেকেই কৃষকবন্ধু ও পিএম কিষানের ভাতা তুলছেন কয়েক হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন বাংলা থেকে পালাতে চাইছেন ‘বাংলার জামাই’ আলুওয়ালিয়া
তদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে যে জানা, ময়নায় বিঘার পর বিঘা জমিতে যে মাছ চাষ হয় সেখানেই মাছের খাবারের মধ্যে ফ্লোরাইড, আর্সেনিক, সীসা প্রভৃতি মেশানো থাকছে। দ্রুত মাছ বড় করার সময় ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানোয় জমির পিএইচ মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। মাটির নমুনা পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাটিতে অম্ল-ক্ষারের মাত্রা ৬-এর কম। এককথায় মাটি বিষিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ জল তুলে মাছের গাড়িতে ভর্তি করা হয়। এরকম প্রতিদিন কয়েকশো গাড়িতে জল ভর্তি করা হয়। মাছ বিক্রির পর সেই জল ফেলে খালি গাড়ি আসে। এর ফলে প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার জল অপচয় হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে এই মুহূর্তে সঙ্কটজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে এই ব্লক। ২০২২-’২৩ আর্থিক বছরে কোনও ব্লকে ৩০০জন কৃষকবন্ধু উপভোক্তার মৃত্যু হয়নি। রাজ্যের মধ্যে একমাত্র ময়না ব্লকেই তা হয়েছে। ১৮ বছর বয়স হলে এবং নিজের নামে চাষযোগ্য জমি থাকলে কৃষকবন্ধুর ভাতা পাওয়া যায়। উপভোক্তা ১৮-৬০ বছরের মধ্যে মারা গেলে সেই পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। ময়নায় এরকম ৩০০ পরিবারকে ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এরজন্য ডেথ সার্টিফিকেট(Death Certificate) জমা দিতে হয়। ব্লক কৃষিদফতর সেইসব ডেথ সার্টিফিকেট খতিয়ে দেখে মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করেছে। দেখা যাচ্ছে ৬০ বছরের আগেই মাত্র ১ বছরের মধ্যে ১৮০ জন হৃৎরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে ক্যান্সারে। বেপরোয়া রাসায়নিকে ময়নায় হৃদরোগ ও ক্যান্সার রোগের হার বাড়িয়ে দিয়েছে।