নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার(Kolkata) বাসিন্দা এক কিশোরীর(Minor Girl) সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এক যুবকের। সম্পর্কে থাকাকালীন ওই কিশোরীর সঙ্গেও সহবাসে লিপ্ত হয়েছিল ওই যুবক। তার জেরে গর্ভবতী হয়ে পড়ে সেই নাবালিকা। সেই ঘটনার জেরে নাবালিকার পরিবার ওই যুবকের বিরুদ্ধে পকসো আইনে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতারও করে। নিম্ন আদালত সেই ঘটনায় ওই যুবককে ২০ বছর সশ্রম কারাদন্ডের নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ওই যুবক মামলা দায়ের করে কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court)। সেই মামলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে এক চাঞ্চল্যকর রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। পকসো আইনে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবককে বেকসুর খালাস করে দেওয়ার পাশাপাশি আদালত জানিয়েছিল, কিশোরীদের যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)। সেই মামলাতেই এদিন অর্থাৎ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট ওই নাবালিকাকে নোটিস(Notice) পাঠানোর নির্দেশ দিল।
কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, কিশোরীদের যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। দু’মিনিটের তৃপ্তির জন্য সেই নিয়ন্ত্রণ হারানো উচিত নয়। আর কিশোরদের উচিত, কিশোরী-মহিলাদের মর্যাদা এবং তাঁদের শারীরিক স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, কিশোরীদের নিজের শরীরে অধিকার, সম্মান এবং নিজের মূল্য রক্ষা করতে হবে। যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ দু’মিনিটের সুখের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারালে সে নিজেই সমাজের চোখে ‘ব্যর্থ’ হবে। নিজের গোপনীয়তা এবং শরীরের অধিকার নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। কিশোরদেরও কিছু পরামর্শ দিয়ে দুই বিচারপতি জানিয়েছিলেন, কিশোরী এবং মহিলাদের যে কর্তব্যের কথা হাইকোর্ট জানিয়েছে, তাকে সম্মান করতে হবে। এক জন মহিলা, তাঁর আত্মসম্মান, তাঁর মর্যাদা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, শারীরিক অধিকারকে সম্মান করতে হবে কিশোরদের।
গত ৪ জানুয়ারির শুনানিতে সেই রায়ের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট। জানায়, রায়ের প্রত্যেক অনুচ্ছেদ ‘সমস্যাযুক্ত’। পাশাপাশি, এই রায়ের নেপথ্যে কী আইনি নীতি রয়েছে, তা-ও জানতে চায় আদালত। এদিনও ছিল সেই মামলার শুনানি। তাতেই এদিন দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ওই নাবালিকাকেও নোটিস দিতে হবে। সেই সময় রাজ্যের আইনজীবী জানান, অভিযুক্ত যুবককে নোটিস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্যাতিতা নাবালিকাকে নোটিস দেওয়া হয়নি। তার পরেই বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুয়ানের বেঞ্চ জানায়, নাবালিকাকেও নোটিস দিতে হবে। নোটিস পাওয়ার পর নাবালিকা তার বক্তব্য আদালতে জানাতে পারবে। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সেই সঙ্গে আদালত এদিন জানিয়েছে, নাবালিকার একটি শিশু রয়েছে, তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন। এই ধরনের বিয়ে আইনের চোখে অপরাধ। সরকারের প্রচার করা দরকার। অভিযুক্ত এবং নাবালিকার মধ্যে বয়সের পার্থক্য অনেক বেশি। আগামী শুনানিতে তাঁরা এই বিষয়টি পুরোটাই দেখবেন বলেও জানান।