নিজস্ব প্রতিনিধি, কর্নাটক : ‘মাদার কার্ড’ নেই। তাই প্রসূতিকে ভর্তি নেয়নি সরকারি হাসপাতাল। অগত্যা তীব্র প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসক ছাড়াই জন্ম হয় দুই যমজ সন্তানের। কিন্তু প্রসবের পরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা। যা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লেন সদ্যপ্রসূতি। বাঁচেনি তাঁর দুই সদ্যোজাতও। ঘটনাটি বিজেপিশাসিত কর্নাটকে।
ঘটনার কেন্দ্রস্থল কর্নাটকের টুমাকুরু। বিজেপিশাসিত এই রাজ্যের নিয়ম অনুসারে কোনও প্রসূতিকে সরকারি হাসপাতালে প্রসব করানোর জন্য আগে থেকে একটি ‘মাদার কার্ড’ বানিয়ে রাখতে হয়। এই কার্ডটি ছাড়া কোনও সরকারি হাসপাতাল প্রসূতিকে ভর্তি নেয় না। তবে এমন নিয়মের কথা বোধহয় জানতেন না তামিলনাড়ুর ভারতীনগর এলাকার বাসিন্দা কস্তুরী ও তাঁর বাড়ির লোক। হঠাৎ করে প্রসব বেদনা শুরু হওয়ায় কস্তুরীকে নিয়ে নিকতবর্তী কর্নাটকের টুমাকুরু জেলা সদর হাসপাতালে হাজির হন তাঁর পরিবারের লোকেরা। কিন্তু আদতে তামিলনাড়ুর বাসিন্দা কস্তুরীর কাছে সেই সময় কর্নাটক সরকারের দেওয়া কোনও ‘মাদার কার্ড’ ছিল না। সরকারি পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ডও ছিল না তাঁর। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে। এমনকী, চিকিৎসকেরা প্রাথমিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা করতেও অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। প্রসূতির যন্ত্রণার তীব্রতা আরও বাড়লে নিকটবর্তী এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতেও ব্যর্থ হন কস্তুরীর পরিবারের সদস্যরা। ফলত কস্তুরীকে শেষমেশ বাড়িতেই ফিরিয়ে আনা হয়। আর সেখানেই, কোনও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়াই দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন মহিলা। কিন্তু প্রসব পরবর্তী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শুশ্রষারও কোনও ব্যবস্থা ছিল না বাড়িতে। ফলত অস্বাভাবিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন তিনি। মায়ের সঙ্গেই মৃত্যু হয় দুই সদ্যোজাতের।
এদিকে ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয় ভারতীনগর এলাকায়। বিক্ষোভের জেরে সরকারি হাসপাতালটি পরিদর্শনে যান কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে সুধাকর। টুমকুর জেলা প্রশাসনের খবর অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত তিন চিকিৎসককেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যে চিকিৎসার অভাবে এভাবে এক প্রসূতি ও শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের তোপের মুখে গেরুয়া শিবির।