এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

ভোগে ঘি-ভাত, হালদার বাড়িতে আজও পূজিত হন তিন ফুটের দুর্গাপ্রতিমা

নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্গাপুজো আর কলকাতা শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্য যেন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বারোয়ারি পুজো শুরু হওয়ার আগে শুধু বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোই নজর কাড়ত শহরবাসীর। এক একটি বাড়িতে এক এরকম নিয়ম। কোনও বনেদি বাড়িতে আলাদা পুজোর নিয়ম, কোনও বাড়িতে নিয়ম আলাদা ভোগের। আবার অনেক বনেদি বাড়িতেই স-পরিবারে পূজিত হন না উমা। ঠিক যেমনটা দেখা যায় বাগবাজারের হালদার বাড়িতে। এখানে দেবীমূর্তি কষ্ঠিপাথরের। প্রাচীন এই মূর্তিতে দুর্গার দু’পাশে একটু নীচের দিকে রয়েছেন তাঁর দুই সখী জয়া আর বিজয়া। মাথার উপরে রয়েছে মহাকাল। সালঙ্কারা দুর্গা পদ্মের উপর আসীন। এই মূর্তিই প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে গৃহদেবতা হিসাবেই পূজিত হয়ে আসছে। দশমীতে মূর্তি নয়, বরং ঢাক বিসর্জন দেওয়া হয় হালদার বাড়িতে।

হালদার পরিবারের আদি নিবাস চন্দননগরের নোয়াপাড়া অঞ্চলে। স্বর্গীয় কৃষ্ণপদ হালদার কলকাতায় এসে জমি বাড়ির ব্যবসা শুরু করে বিত্তশালী হয়ে উঠেন ও জানবাজার অঞ্চলে বাড়ি তৈরি করেন। তার দুই পুত্র নীলমনি ও প্রাণকৃষ্ণ হালদার সেই যুগের বাবু সংস্কৃতির পৃষ্টপোষক ছিলেন। তাদের সময় কষ্টিপাথরের মূর্তির সঙ্গে মৃন্ময়ী মূর্তিরও পুজো করা হত। পরে আর্থিক সংকটে পরে জানবাজারের বাড়ি বিক্রি করে বাগবাজার অঞ্চলের এই বাড়িতে চলে আসে পরিবার। কষ্টিপাথরের মূর্তিটি নতুন করে প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপুজো শুরু করেন। সারাবছর দেবীকে পূর্বমুখী করে পুজো করা হলেও দুর্গাপুজোর সময় দেবীকে দক্ষিণমুখী করা হয়। কারণ পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস, কৈলাশ থেকে দেবী দক্ষিণ মুখে মর্তে আসেন।

এই কষ্টিপাথরের মূর্তির ইতিহাস খুবই ঝাপসা। কথিত আছে, পরিবারের কোনও এক সদস্য একসময় ওড়িশার বালেশ্বরের সাহেবপুর অঞ্চলে ঘুরতে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই তিনি স্বপ্নাদেশ পান, স্থানীয় এক জেলের বাড়িতে মাটির ১৪ ফুট গভীরে রয়েছে দেবী দুর্গা। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিত্যসেবা করার আদেশ পান। সেই মতো মাটি খনন করে উদ্ধার হয় তিন ফুটের মূর্তি। পুজোয় হালদার বাড়ির মেয়েরা দূর্গাষষ্ঠী পালন করেন না। তারা এই দিন মাছ খেয়ে,মুখে পান খেয়ে ঠাকুরদালানে আসেন। সপ্তমীর দিন দু’টি বিরাট ছাতায় হালদার বাড়ির নবপত্রিকা ও আরও এক জ্ঞাতি বাড়ির নবপত্রিকা একসঙ্গে গঙ্গায় যায়। পুরনো বাড়ি হলেও বাড়ির মেয়েদের গঙ্গার ঘাটে যাওয়াতে আগে থেকেই কোনও বিধিনিষেধ নেই। বরং গঙ্গারঘাটে মহিলাদের যাওয়াটাই হালদার বাড়ির রীতি।

তবে সন্ধি পুজোর আয়োজনে হাত লাগায় না বাড়ির মহিলারা। সব কাজই করে পুরুষরা। নবমীতে এই বাড়িতে অঞ্জলি ও হোমের শেষে কুমারী পুজো হয়। দালানে কুমারীপুজো হয়ে যাওয়ার পর বাড়ির ছেলেরা কুমারীকে কাঁধে করে গৌড়ীয় মঠে নিয়ে গিয়ে তিনবার ঘুরিয়ে প্রদক্ষিণ করেন। বয়সভেদে পূজিত কুমারীকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। দশমীতে এই বাড়িতে বিষাদের সুর থাকে না,কারণ মূর্তি বাড়িতেই থাকে শুধু ঘট ও নবপত্রিকা বিসর্জন হয়। পাশাপাশি মেয়েরা ঠাকুর বরণ করে ঢাকিকে কাপড়,ফল,মিষ্টি উপহার দেন। এই প্রথাকে বলে ‘ঢাক বিসর্জন’। ঢাক বিসর্জনের পর আর ঢাকে কাঠি পরে না। নবপত্রিকা ও ঘট বিসর্জনের পর বাড়িতে দুর্গার মূর্তিও পুনরায় পূর্বমুখী করে বসানো হয়।

হালদার বাড়িতে মা দুর্গার ভোগেও রয়েছে কিছু ভিন্ন পদ। অন্নভোগই দেওয়া হয়, তবে ষষ্ঠীতে ‘ঘি-ভাত’ নিবেদন করা হয়। সঙ্গে থাকে আলু,পটল,ফুলকপির তরকারি ও নানা ভাজা। ভাজার মধ্যে মাখন দিয়ে শিম ভাজা অবশ্যই দিতে হবে। এছাড়াও থাকে চাটনি, পায়েস। পায়েসের জন্য চাল, ডাল, দুধের পরিমাণ থাকে এক। সবকিছুই থাকে পাঁচ পো করে। মাপের একচুল এদিক-ওদিক হলে সেই ভোগ আর দেবীকে দেওয়ায় যোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। সপ্তমী,অষ্টমীতে খিচুড়ি ভোগ হয়। এর সঙ্গে মাটির মালসায় লেবু আর বাটাচিনি দিয়ে সরবত দেওয়া হয়। সন্ধের ভোগে থাকে লুচি,তরকারি,চাটনি,পায়েস ও বাটাচিনি। দশমীর দিন বাড়ির মেয়েরা মাছ-ভাত খেয়ে, মুখে পান দিয়ে ঢাক বিসর্জন করেন।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

জলপাইগুড়ির রাজবাড়িতে মা দুর্গার ভোগে দেওয়া হল পাঁচ রকমের মাছ

দশমীতে মাকে গঙ্গার উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রদক্ষিণ করিয়ে দেওয়া হয় বিসর্জন….

মহিষাদল রাজবাড়ির অষ্টমী পুজো ঘিরে চরম উদ্দীপনা

বেঙ্গালুরুতে জমজমাট বনেদি পাল বাড়ির দুর্গাপুজো

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির পুজোয় আজও বলি হয় পায়রা

এই বনেদি বাড়িতে মহামায়াকে সোনার অলঙ্কার পরিয়েই বিসর্জনে পাঠানো হয়

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর