নিজস্ব প্রতিনিধি, বালুরঘাট: বাংলাদেশ থেকে বালুরঘাটে এসে জমিদারি স্থাপন করেছিল সাহা পরিবারের পূর্বপুরুষরা। জমিদারি যখন ফুলে-ফেঁপে উঠছে, এমন এক সময়ে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল বাড়িতে। এবছর ১৮১ বছরে পা দিল বালুরঘাটের সাহা বাড়ির দুর্গাপুজো। জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি হয়েছে, কিন্তু আজও বদলায়নি পুজোর রীতি-রেওয়াজ।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, কোনও এক সময়ে বাংলাদেশের পাবনা জেলা থেকে নৌকা করে এদেশে এসেছিল সাহা পরিবারের সদস্যরা। ক্রমেই তাঁদের ধন-সম্পত্তি বাড়তে থাকে। প্রতিবছর পুজোর সময় বাংলাদেশ থেকে পরিবারের আত্মীয়-স্বজনরা আসতেন। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে সাহা বাড়ি কার্যত এক মিলনমেলায় পরিণত হত। দেশভাগের পর অবশ্য ওপার বাংলায় থাকা সাহা পরিবারের প্রত্যেকেই চলে আসে এপার বাংলায়। এখন আর সেই মিলনমেলার ভরপুট আড্ডা নেই। বাড়ির সদস্যরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন। প্রতিবছর পুজোর সময়ই তাঁরা একত্রিত হন।
সাহা বাড়ির পুজোয় বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বাড়ির এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর গণেশ-কার্তিকের স্থানবদল করা হয়। আজও এখানে মা দুর্গার বাঁদিকে বসানো হয় গণেশের মূর্তি। কার্তিকের মূর্তি বসানো হয় ডান দিকে। সাহা বাড়ির পুজোর আর এক বিশেষত্ব হল, হয় না অন্নভোগ। বরং লুচি-মিষ্টি-ফল দিয়েই দেবীর পাঁচদিনের ভোগের আয়োজন করা হয়। জামিদারি আমলে অগুনতি মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হত প্রসাদ। আগে পুজোর ক’দিন প্রায় প্রতিদিনই গান-বাজনার আসর বসত। বাইরে থেকে আসতেন শিল্পীরা। এখন আর অবশ্য কোনও অনুষ্ঠাই হয় না।
জমিদারি নেই, পুজোর সেই জৌলুসও হারিয়েছে। কিন্তু এই পুজো দেখতে প্রচুর মানুষ আজও ভিড় জমান সাহা বাড়ির দুর্গা দালানে। পরিবারের সদস্যরাও সারাবছর এই পুজোর ক’টা দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। করোনা আবহে গতবছর সকলে একত্রিত হতে পারেননি যদিও। এবছরও পুজোর গাইডলাইনেও কোভিড বিধি মেনে চলার নির্দেশ রয়েছে। তবে পরিবারের সকলে এবার মিলিত হতে পারবে কি না, তা অবশ্য পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করছে।