নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনা সংক্রমণ এবং নানা বিধিনিষেধের জেরে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এই পরিস্থিতিতে প্রায় সকলকেই দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি। সকলের মনেই এক আশা, “এক দিন ঝড় থেমে যাবে, ‘পৃথিবী আবার শান্ত হবে”। এই আশা নিয়েই বাঙালি ফের বেড়িয়ে পড়বে অজানাকে জানতে, প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ চেটেপুটে গ্রহণ করতে। এবার পুজোর মরশুমে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থাকলেও বিধিনিষেধ অনেকটাই কম। কারণ প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। ফলে এবার অনেকেই ঠিক করে ফেলেছেন পুজোয় কোথাও বেড়াতে যাবেন। আজ আপনাদের বলব উত্তরবঙ্গের এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডেরার গল্প।
ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি, কেউ চায় সাগরের জল পায়ে নিয়ে সৈকতে ঘুরে বেড়াতে, কেউ চায় শুধুই পাহাড়ের কোলে ঘুরে বেড়াতে। আবার কেউ কেউ আবার জঙ্গলের আদিমতা এবং সোঁদা গন্ধ গায়ে মেখে প্রকৃতিকে আপন করে নিতে চায়। আমাদের এই রাজ্যেরই এক জঙ্গলের কথা বলব আজ। দেব সমস্ত তথ্য ও ঘোরার ঠিকানা। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে বেশ কয়েকটি জঙ্গল বা অভয়ারণ্য রয়েছে। তারমধ্যে তিস্তা ও মহানন্দা নদীর তীরে এবং হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত অত্যন্ত সুন্দর জঙ্গল মহানন্দা অভয়ারণ্য। মোট ১৫৮ স্কোয়ার কিলোমিটার বনভূমি। যা ১৯৫৮ সালে রয়াল বেঙ্গল টাইগার এবং গৌর (ইন্ডিয়ান বাইসন) সংরক্ষণ করার জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
আমরা যারা দার্জিলিং বা গ্যাংটক যাই, তাঁরা প্রত্যেকেই যে রাস্তা ধরি, সেটা সেবক হয়েই যায়। জানেন কি, এই পথেই পরে মহানন্দা অভয়ারণ্য়। তাই আলাদা করে পরিকল্পনা না করে বরং শৈল শহরে ঢুঁ মারার পথে টুক করে মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘুরে দেখতে খুব বেশি সময় লাগবে না। শিলিগুড়ি শহর থেকে মহানন্দা অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র ১৩ কিমি। ফলে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় রয়াল বেঙ্গলের ডেরায়। এই বনের ৬০ ভাগ পার্বত্যভূমি এবং অবশিষ্ট অংশ সমতল, সর্বোচ্চ বিন্দু ১৩০০ মিটার উঁচু। এশীয় হাতি, ইন্ডিয়ান বাইসন বা গৌর, দেশী বন্য শুকর, সম্বর হরিণ, চিতাবাঘ, পাহাড়ি কালো ভাল্লুকেরও দেখা মেলে এই মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। তবে এখানকার মূল আকর্ষণ অবশ্যই রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
মহানন্দা অভয়ারণ্য পুরো ঘুরে দেখতে (সাফারি) সময় লাগে মোটামুটি ঘন্টা দুয়েক। ফলে এখানে থাকার কোনও প্রয়োজন হয় না। তবে যদি কেউ থাকতে চান, তবে সেনাবাহিনীর বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। যদিও আগেই বলেছি, দার্জিলিং বা কালিম্পঙ যাওয়ার বা ফেরার পথে এই জঙ্গল সাফারি করে নিতে পারেন। যা বাড়তি পাওনা হবে পরিবারের ছোট্ট সদস্যদের কাছে। বছরের কমবেশি সব মরসুমেই আসা যায় মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে।