নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদা: করোনা আর লকডাউনের সাঁড়াশি চাপে দিশেহারা ঢাকিরাও। ঢাক ছেড়ে এখন অধিকাংশ ঢাকিই বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। বেশিরভাগ ঢাকিই এখন দুই বেলা পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন তুলছে লেগে পড়েছেন দিনমজুরির কাজে। গত দু’বছর ধরে প্রায় একই অবস্থা। অনেকেই আবার পরিবার নিয়ে আত্মহত্যার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।
মালদা জেলার কালিয়াচক ২-এর রথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে নওগাঁ এলাকার একটি পাড়াজুড়ে প্রায় ৫০টি ঢাকি পরিবারের বসবাস। করোনাকালের আগে তাদের খুব একটা অভাব-অনটন ছিল না। বিগত দিনে ভিন রাজ্য যথা— দিল্লি , মুম্বই , মধ্যপ্রদেশ , উত্তরাখণ্ড, আসাম, ঝাড়খন্ড, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্যের ঢাক বাজানোর মোটা টাকা পেতেন। যার দরুন পরিবারের লোকেরাও কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পুজোর কটা মাস কাটাতেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে করোনা সংক্রমণের জেরে এখন জেরবার অবস্থা ওইসমস্ত ঢাকি পরিবারগুলির।
বায়না না মেলায় এখন কেউ ঠিকা শ্রমিক। আবার কেউ রাজমিস্ত্রির কাজে সহযোগী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। কেউ বা করছেন জুতো সেলাই। অনেকের হাতে আবার একেবারেই কাজ নেই। ফলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অনেক পরিবার। এই অবস্থায় কি করবেন, কিছুই ভেবে উঠতে পারছেন না তাঁরা। তাই মালদার ঢাকিদের সরকারি সহযোগিতার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে বিভিন্নভাবে দরবার করেছেন অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা।
নওদা ঢাকিপাড়া এলাকার এক ঢাকি উত্তম রবিদাসের কথায়, ‘আগে সারাবছর ধরেই বায়না পেতাম। পুজোর সময় ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতাম। সেখানে মোটা টাকা আয় হত। কিন্তু করোনার জন্য গতবছরের মতো এবারও ভিনরাজ্য থেকে কোনও বায়না আসেনি।’ এলাকার আরও এক ঢাকি বাবলু রবিদাস বলেন, ‘বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে বহন করে নিয়ে আসা প্রাচীন এই শিল্প এখন তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। চরম আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটছে আমাদের মতো অসহায় পরিবারগুলির। সরকারি কোনও সাহায্য পেলে কোনওমতে সংসারটা সামাল দেওয়া যাবে।’