নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা পুরনিগমের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড। অবস্থান যাদবপুর বিধানসভার মধ্যে। কার্যত একসময়ের বামদুর্গ। কিন্তু সেখানেই ২০১৫ সালে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন তিনি। আর সেই জয় এসেছিল প্রায় ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে। আবারও একটা পুরভোট চলে এসেছে। এবারও তিনি শাসক পক্ষের প্রার্থী হয়েছেন, সেই ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডেই। আর এবারে তাঁর লক্ষ্য কিন্তু নিজের আগেরবারের জয়ের মার্জিনকে ছাপিয়ে যাওয়া। তবে সেই লক্ষ্য জয়ের পথে চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে, সেই চ্যালেঞ্জ জল সংকটের। বাড়ি বাড়ি প্রতিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার সেই চ্যালেঞ্জকেই লুফে নিয়েছেন তিনি, কেননা তাঁর ওয়ার্ড কার্যত বিরোধী শূন্য। তাই নিজের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জকেই প্রতিপক্ষ বানিয়েছেন তিনি। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন তিনি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাড়ির সব মহিলারা পেয়েছেন কিনা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা তাঁরা পেয়েছেন কিনা। তিনি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুরনিগমের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও বিদায়ী কো-অর্ডিনেটর। একই সঙ্গে অভিনেত্রীও।
কলকাতা পুরনিগমে যে সমস্ত সংযুক্ত এলাকা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড। বাইপাস লাগোয়া এই এলাকা বাম জমানায় কার্যত চূড়ান্ত অনুন্নোয়নে ডুবে থাকতো। বেশ কিছু এলাকায় না ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ, না ছিল পাকা রাস্তা, না ছিল পানীয় জলের সংযোগ। সেই ছবিই অনন্যার হাত ধরে বদলাতে শুরু করে ২০১৫ সালের পর থেকে। ২০২১ এর শেষ লগ্নে এসে সেই ওয়ার্ডকে কার্যত উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছেন অনন্যা। পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলে এলাকাবাসীর কাছে কার্যত নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন অনন্যা। তবে বেশ কিছু এলাকায় এখনও পানীয় জলের সমস্যা রয়েই গিয়েছে। কারন সেখানে জলের বড় পাইপ এখনও বসেনি। সেই পাইপ না বসার জন্য এখনও বেশ কিছু বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারেননি এই তারকা প্রার্থী। তবে সেই অপ্রাপ্তিকেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন অনন্যা। কেননা তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো বিরোধী কোনও দল সেখানে নেই। না বিজেপি, না বাম না কংগ্রেস। নিজের ওয়ার্ডে তাই প্রচারে বেড়িয়ে নিত্যদিনই একাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তৃণমূলের এই ‘শেরনী’ প্রার্থী।
রুপালী পর্দার মানুষেরা আমজনতার কাছে ধরা দিতে চান না চট করে। সেখানে ব্যতিক্রমী অনন্যা। প্রচারে বেড়িয়ে বার বার চলে যাচ্ছেন আমজনতার ঘরে। বড়দের প্রণাম, ছোটদের সঙ্গে সেলফি, আর মহিলাদের সঙ্গে একাত্মা হয়ে শুনে নিচ্ছেন তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা। জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের সমর্থন, সহযোগিতা আর আশির্বাদ পেলে তাঁর বাকি থাকা কাজও তিনি আগামী ৫ বছরে সেরে ফেলবেন। মানুষ সেই কথায় আস্থা রাখছে, ভরসা রাখছে, বিশ্বাস রাখছে। তাই পাড়ায় অনন্যা প্রচারে এলেই শ্লোগান উঠছে ‘যদি চাও উন্নয়ন, অনন্যাকেই প্রয়োজন’। তবে বিরোধীদেরও অভিযোগ আছে, তবে সেই অভিযোগ একা অনন্যার বিরুদ্ধে নয়, সামগ্রিক ভাবে শাসকের বিরুদ্ধেই। তাঁদের দাবি, প্রচারে বাধা দিচ্ছে শাসক পক্ষ। আমজনতার স্বতঃস্ফূর্তা কিন্তু অন্য কথাই বলছে। বিরোধীদের দিকে তাঁরাই ছুঁড়ে দিচ্ছেন পাল্টা প্রশ্ন, যা গত সাড়ে ৬ বছরে একটা মেয়ে করে দেখাতে পেরেছে সেটা ৩৪ বছরের শাসক ক্ষমতায় থেকে কেন করে দেখায়নি। আর এখানেই অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যাচ্ছেন অনন্যা। বিরোধী শূন্য ওয়ার্ডে তাঁর জয়ও কার্যত শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।