নিজস্ব প্রতিনিধি: বেঁচে থাকলে আজকে তিনি ৯৬ বছরে পা রাখতেন। কিন্তু প্রায় ৪১ বছর আগে সবাইকে ছেড়ে চিরকালের মত এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে পরপারে চলে গিয়েছেন। উত্তম কুমার, প্রতিটি কাছে বাঙালির ইমোশন। আজ ৩ সেপ্টেম্বর। মহানায়ক উত্তমকুমারের ৯৬ তম জন্মবার্ষিকী। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জন্যে মন বিষন্ন বাঙালির। আজ তিনি না থাকলেও তাঁর অমূল্য স্মৃতিটুকুই বাঙালীর সম্পদ। তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলি কখনই বিগলিত হবেনা। আর তাঁর মত কাউকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আর কোনদিনও পাবে কিনা সন্দেহ! তিনি এক এবং অদ্বিতীয়।
কিন্তু জানেন কী, বাস্তবেও মহানায়কের জীবনটা আচ্ছা আচ্ছা সিনেমার গল্পকে হার মানাবে। আজ তিনি আর নেই, পরে রয়েছে শুধু তাঁর স্মৃতিটুকুই। সাতের দশকের শুরুর দিকে, কলকাতায় নকশাল আন্দোলনের সময় উত্তম কুমারের নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওর তাঁর নিজস্ব মেকআপ রুমে সশস্ত্র হানা দিয়েছিল কয়েকজন যুবক। এমনকি উত্তমকুমারের বুকে তাঁরা অস্ত্র ঠেকিয়ে খুনের হুমকিও পর্যন্ত দিয়েছিল। সেই ঘটনায় উত্তম কুমার এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে, সেই দিনই তিনি মাথার চুল ছোট করে কেটে বম্বে মেল-এ চড়ে বসে ছিলেন। যাতে কেউ তাঁকে চিনতে না পারে। তার পরের ঘটনা আরও ভয়ঙ্কর, রীতিমতো ভয়ঙ্করভাবে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন।
মুম্বই এসে প্রথমে তিনি উঠেছিলেন অভিনেতা অভি ভট্টাচার্যর বাড়ি। এভাবে মাস খানেক টানা মুম্বইয়ে কাটিয়ে ছিলেন উত্তম কুমার। কখনো অভি ভট্টাচার্যর বাড়ি আবার কখনো অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে থেকেছিলেন তিনি। তখন মুম্বইয়ের বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজের ফ্ল্যাটে সুপ্রিয়া দেবীকে সঙ্গে নিয়ে উত্তম কুমার গিয়েছিলেন।
এমনকি কলকাতার ওই ঘটনার পর তিনি ঠিকই করে ফেলেছিলেন যে, আর কলকাতায় ফিরতে পারবেন না বোধহয়। এতটাই ভয় পেয়েছিলেন তিনি। এমনকি তিনি বিশ্বজিতের ফ্ল্যাটে বসে বিশ্বজিৎ-কে বলেছিলেন, ‘বিশু, চল, তুই আর আমি মিলে এখান থেকেই বাংলা ছবি বানাব। আর এখানে বসেই বাংলা ছবির শ্যুটিং করব।’ এতটাই সেই ঘটনা নাড়িয়ে উত্তম কুমারকে।
সেই মুহূর্তে বেনুদি বলেছিলেন যে, সেদিন এতটাই উত্তমদা, ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে, তাঁর পুরো শরীর হলুদ হয়ে গিয়েছিল। ঠিক তার আগেই উত্তম কুমার হার্ট অ্যাটাকের ঝাপটা সামলে উঠেছিলেন। তবে শেষমেষ ফিরছিলেন কলকাতায়। তারপরেও একগুচ্ছ ছবি উপহার দিয়েছিলেন তিনি। উত্তমকুমার এই স্মৃতিগুলির মাধ্যমেই আমাদের বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতিতে থেকে যাবেন সারাজীবন।