নিজস্ব প্রতিনিধি: বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ বরাবরই সোশ্যাল সক্রিয়। তিনি সর্বদা ‘সোজা কথা সোজাভাবে বলতে ভালবাসেন।’ এছাড়াও রাজনৈতিক হোক বা এমনি যেকোন বিষয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে মতপ্রকাশ করতে ভালবাসেন তিনি। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদী মেজাজ খুব একটা পছন্দ নয় একাধিক ব্যক্তিত্বের। খুব শীঘ্রই জি ফাইভের সিরিজ ‘তাজ: ডিভাইডেড বাই ব্লাড’-এ সম্রাট আকবরের ভূমিকায় প্রবীণ অভিনেতাকে দেখা যাবে। মুঘল যুগের অজানা ঐতিহাসিক মুহূর্ত উঠে আসবে এই সিরিজে। এবার এই সিরিজের প্রচারে এসেই আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন নাসিরুদ্দিন শাহ।
সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে অভিনেতা প্রচারে এসে মুসলিমদের পক্ষে একাধিক কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমাদের পাঠ্যপুস্তক গুলিতে মুঘলদের বিরুদ্ধে অনেক বিরূপতা রয়েছে। অবিলম্বে আমাদের এটি পরিবর্তন করতে হবে। মুঘলরা যদি সবকিছু খারাপই করত তাহলে মুঘলদের তৈরি রেডফোর্ট, তাজমহলের মতো একাধিক স্মৃতিসৌধগুলি অবিলম্বে ভেঙে ফেলা উচিত। বিষয়টি মুঘলদের মহিমান্বিত করার বিষয় নয়, তাঁদের অপমান করা উচিত নয়।’
শাহ সক্রিয়ভাবে ক্ষমতাসীন সরকার সম্পর্কেও একাধিক কথা বলছেন, লোকেরা কিছু শুনতে বা প্রশ্ন করতে প্রস্তুত নয়, তাঁরা কেবল অনুসরণ করতে প্রস্তুত। মানুষ আজ কেবল অতীতের প্রতিকূলতাকে দোষ দিতে চায়।” যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, লোকেরা কেন আমাদের দেশে সবকিছুই মুঘলদের কাজ বলে বিশ্বাস করে, তখন তিনি বলেছিলেন, “এটি আমাকে মজা দেয় কারণ এটি অত্যন্ত হাস্যকর। আমি বলতে চাচ্ছি, লোকেরা আকবর এবং নাদের শাহ বা বাবরের প্রপিতামহ তৈমুরের মতো খুনি আক্রমণকারীর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।” তারা মতে, সুস্থ বিতর্কের পরিসর এদেশে নেই। ইতিহাস চেতনার অভাব বাড়ছে। সুতরাং ঘৃণাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। মানুষরা বিশেষ করে মুঘল দের খারাপ চোখে দেখছে। গত কয়েকবছর ধরেই মুঘল যুগকে অপমান করে যাচ্ছে শাসক দল। চল্লিশটি শহরের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। যেগুলি মুঘলদের নামের স্মৃতি বহন করছিল।”
শাহ আরও বলেন, “মুঘলরা এখানে লুট করতে এসেছিল ধারণা সবার, মুঘলরা এখানে লুট করতে আসেনি। তাঁরা তাঁদের বাড়ি বানাতে এখানে এসেছিল এবং তারা তাই করেছে। তাদের অবদান কে অস্বীকার করতে পারে?” প্রবীণ অভিনেতা আরও বলেন, পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস পরিবর্তন করতে হবে কিন্তু মুছে ফেলা হবে না। দুর্ভাগ্যবশত, ইতিহাস মূলত মুঘল বা ব্রিটিশদের উপর নির্ভর করে। আমরা লর্ড হার্ডি, লর্ড কর্নওয়ালিস এবং মুঘল সম্রাটদের সম্পর্কে জানতাম, কিন্তু আমরা গুপ্ত রাজবংশ, মৌর্য রাজবংশ, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, অজন্তা গুহার ইতিহাস বা উত্তর-পূর্ব সম্পর্কে জানতাম না। আমরা এই জিনিসগুলি পড়িনি কারণ ইতিহাস ইংরেজ বা অ্যাংলোফাইলদের দ্বারা লেখা হয়েছিল এবং আমি মনে করি এটি সত্যিই অন্যায়।” অভিনেতা সম্মত যে,”মুঘল দের মহিমান্বিত করা হয়েছে তবে তাঁদের মধ্যে অনেকেই আমাদের সংস্কৃতিতে অবদান রেখেছেন।” উপসংহারে বলেন, “তাঁরা যা করেছে সবই যদি ভয়ঙ্কর হয়, তাহলে তাজমহল ভেঙে ফেলুন, লাল কেল্লা ভেঙে দিন, কুতুব মিনার ভেঙে দিন। কেন আমরা লাল কেল্লাকে পবিত্র মনে করি, এটি একজন মুঘল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। আমাদের তাদের গৌরব করার দরকার নেই, তবে তাদের অপমান করারও দরকার নেই।”