নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ টানাপড়েনের অবসান। শেষমেশ নিজের গদি হারাতেই হল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। শনিবার মধ্যরাতে পাক সংসদে ১৭৪ জন সাংসদ ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেন। আর তাই পূর্বসূরীদের মতোই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই প্রধানমন্ত্রীর গদি হারালেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়ক। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই ইমরানকে ছাড়তে হয়েছে তাঁর ইসলামাবাদের বাসভবন। শনিবার মধ্যরাতেই তিনি তাঁর রাজধানীর বাসভবন ছেড়ে দিয়েছেন বলে খবর।
উল্লেখ্য, ইমরান খান হলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি অনাস্থা ভোটে পরাজিত হলেন। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন যাতে এই অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত না হয়। এর আগেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময়ে তিনি সেকথা জানিয়েওছিলেন। সেই সঙ্গে বলেছিলেন যে, পরিস্থিতি যাই হোক তিনি পদত্যাগ কোনওভাবেই করবেন না। কিন্তু শনিবার হঠাৎ সবকিছুই হাতের বাইরে চলে যায় ইমরানের। আর একবার অনাস্থা ভোট হলে তার পরিণতি কি হবে সেটা সকলেরই জানা ছিল।
শনিবার রাত ছিল পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের জন্য টানটান উত্তেজনায় ভরা। ইমরানকে অনাস্থা ভোটে বাধ্য করতে মধ্যরাতেই বসে সুপ্রিম কোর্ট। রাতেই দফতর খোলে নির্বাচন কমিশন। এদিকে পাক সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলের নেতা নাত্রিরা ক্রমাগত অনাস্থা ভোটের জন্য চাপ দিতে থাকে। সুপ্রিম কোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল শনিবার রাত ১২টার মধ্যেই পাক সংসদে অনাস্থা ভোট করাতে হবে। কিন্তু নানা বাহানা করে ইমরান অনাস্থা ভোট এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে সংসদের স্পিকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয় এবং ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে শনিবার রাত ১২টার মধ্যে যদি অনাস্থা ভোট না হয় তাহলে গ্রেফতার করা হবে ইমরানকে। সংসদের বাইরে নিয়ে আসা হয় প্রিজন ভ্যান। সুপ্রিম কোর্টের সামনে নেমে যায় সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে ইমরান শেষমেশ সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন এবং রাত ১২টার আগে বসে সংসদ। নতুন স্পিকার পদে বসেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের সাংসদ সর্দার আয়াজ সাদিক। এর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় অনাস্থা ভোট, যার ফলাফল প্রায় সকলেরই জানা ছিল প্রায়। এদিকে আস্থা ভোট শেষ হওয়ার আগেই বাসভবন তথা ইস্লামাভাদ ছেড়ে চলে যান ইমরান। উল্লেখ্য, খেলার মাঠে কখনও সেই অর্থে ধরাশায়ী হতে দেখা যায়নি ইমরানকে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে শনিবার রাতে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়তে দেখা গেল তাঁকে।