কৌশিক দে সরকার: কোভিডের পর থেকেই দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে অর্থনীতিবিদরা বার বার বলছেন, সরাসরি মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে। কিন্তু সেই কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। কিন্তু ঠিক তার উল্টো ছবি বাংলার(Bengal) বুকে। এখানকার ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকারের হাত ধরে বাংলার বাজার ক্রমশই চাঙ্গা হয়ে উঠছে। নেপথ্যে রাজ্য সরকারের চালু করা একাধিক আর্থসামাজিক প্রকল্প। গতকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার প্রতি দাম ১০০ টাকা করে কমিয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, তাতে নাকি মহিলাদের উন্নয়ন হবে। কোন জাদুবলে সেই উন্নয়ন হবে তার ব্যাখ্যা কিন্তু কোনও নেতাই দিতে পারছেন না। কিন্তু মজার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলার মহিলাদের হাতে প্রতি মাসে লক্ষ্মীর ভান্ডারের(Lakhir Bhandar) টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। তার পরিমাণ কিন্তু ১০০ টাকা নয়। আগামী এপ্রিল মাস থেকে শুধুমাত্র লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য বছরে রাজ্য সরকারের খরচ হতে চলেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা(26 Thousand Crore Rupees Investment)। আর সেই টাকা সরাসরি চলে আসছে বাংলারই বাজারে।
রাজ্যের ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগামী এপ্রিম মাস থেকে বাড়তে চলেছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা। এখন সাধারণ ঘরের মহিলারা পান মাসে ৫০০ টাকা করে বছরে ৬০০০ টাকা। সেটাই এপ্রিল মাস থেকে বেড়ে হতে চলেছে মাসে ১০০০ টাকা করে বছরে ১২০০০ টাকা। তপশিলী জাতি ও উপজাতির মহিলারা এখন পান মাসে ১০০০ টাকা করে বছরে ১২০০০টাকা। সেটাই এপ্রিল মাস থেকে বেড়ে মাসে ১২০০ টাকা করে বছরে ১৪৪০০ টাকা হতে চলেছে। এখন রাজ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডারে উপভোক্তার সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। এপ্রিল মাস থেকে বর্ধিত হারে টাকা প্রদানের বিজ্ঞপ্তিও ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। আর এই এপ্রিল মাস থেকেই বছরে লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য রাজ্য সরকারের খরচ হতে চলেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। দেশের আর কোন সরকার বছরে ২ কোটিরও বেশি মহিলাদের জন্য এত বেশি পরিমাণ খরচ করে? বলতে পারবেন বিজেপির নেতারা? বলতে পারবেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা? বলতে পারবেন আলিমুদ্দিনের কর্তারা? এই কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই করে দেখাতে পারে।
গল্প এখানেই শেষ নয়, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্য বাজেটে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ধার্য হয়েছে রাজ্যের মহিলাদের উন্নয়নের জন্য। লক্ষ্মীর ভান্ডারের পাশাপাশি কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, জয় জোহর প্রভৃতির মাধ্যমে সেই টাকা খরচ করা হবে সারা বছর ধরে। অর্থনীতিবিদদের দাবি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতোই এই ১ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি বাংলার বাজারেই চলে আসবে। সেখান থেকে কর হিসাবে কিছুটা ফিরবে নবান্নের কোষাগারে, আর কিছুটা যাবে দিল্লির দরবারে। আর এই ১ লক্ষ কোটি তাকার বিনিয়োগে চাঙ্গা হবে বাংলার বাজার। প্রধানমন্ত্রী কী এইসবের হিসাব রাখেন। তিনি তো এমন ভাবে সিলিন্ডারের দাম কমালেন যেন দেখে মনে হচ্ছে দেশের মহিলাদের তিনি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ভিক্ষা দিচ্ছেন। মাত্র ১০০ টাকা করে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিনিয়োগ বছরে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা।