নিজস্ব প্রতিনিধি: আদি গঙ্গা(Adi Ganga)। কলকাতা(Kolkata) ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা(South 24 Pargana) জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীখাত একটা সময় গঙ্গার মূল স্রোত ছিল। কিন্তু ভূমিকম্পের জেরে সেই স্রোত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মূল নদী থেকে। গঙ্গা তার গতিপথ বদলে বর্তমান রূপে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই আদি গঙ্গা এখন বুজে যাওয়া এক খাল মাত্র। কিন্তু এখনও এই খাল কলকাতার বুকে নিকাশির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। আর সে কথা মাথায় রেখেই আদি গঙ্গা সংস্কারে হাত দিতে চলেছে মোদি সরকার। ‘নমামি গঙ্গে’(Namami Gange) প্রকল্পের অধীনে ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কলকাতার বুকে ৩টি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা এসটিপি এবং ২২টি নতুন ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে। সেই সঙ্গে সংস্কার করা হবে আদি গঙ্গার ১৫.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খাত। এর ফলে লাভবান হবে ৩৩ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কলকাতা পুরনিগমের(KMC) ২৮টি ওয়ার্ড ও সোনারপুর রাজপুর পুরসভার ৩টি ওয়ার্ডের প্রায় ৩ লক্ষ বাসিন্দা।
খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত আদি গঙ্গাই ছিল ভাগীরথীর নিম্ন স্রোতের মূল অংশ। সেই সময় ব্যান্ডেলের কাছে ত্রিবেণীতে ভাগীরথী বা গঙ্গা ৩টি স্রোতে ভাগ হয়ে যেত। পশ্চিম দিকে সপ্তগ্রাম ছুঁয়ে প্রভাহিত হত সরস্বতী নদী। যার কিছুটা অস্তিত্ব এখনও হুগলি ও হাওড়া জেলায় দেখা যায়। পূর্ব দিকে বয়ে যেত যমুনা নদী যার অস্তিত্ব এখনও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দেখা যায়। কিন্তু এই দুটি নদীই গঙ্গার মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্যত বুজে গিয়েছে। তবে ব্যান্ডেল থেকে সরাসরি দক্ষিণে নেমে আসা গঙ্গার খাত এখনও রয়েছে। এই খাতই সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এখনকার কলকাতা বন্দর লাগোয়া আলিপুর চিড়িয়াখানার কাছে বাঁক নিয়ে পূর্ব দিকে বেঁকে কালিঘাট, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, বারুইপুর, মগরাহাট হয়ে সাগরে গিয়ে মিশত। এই পথ ধরেই শ্রীচৈতন্য নীলাচলে গিয়েছিলেন। বাংলার প্রভূত প্রাচীন সাহিত্যে এই নদীর সন্ধান মেলে। তবে ভূমিকম্পের জন্য এই স্রোতটি গঙ্গার মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবর্তে গঙ্গার স্রোত বইতে থাকে বর্তমান নদীখাতে অর্থাৎ হাওড়া ছুঁয়ে উলুবেড়িয়া, ডায়মন্ডহারবার হয়ে সাগরের পথে। থেকে যায় আদি গঙ্গার খাত যা এখন অনেকাংশে বিলুপ্ত।
কিন্তু ঘটনা হল আদি গঙ্গা এখনও দক্ষিণ কলকাতা, রাজপুর-সোনারপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একটা বিস্তীর্ণ অংশে নিকাশির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কিন্তু তা জায়গায় জায়গায় বুজে যাওয়ার জন্য বা তার খাত দখল হয়ে যাওয়ার জন্য এখন সে জল টানার ক্ষমতাটাও হারিয়েছে। আর তাই বর্ষাকালে বা একটু বেশি বৃষ্টি হলেই দক্ষিণ কলকাতা ও লাগোয়া এলাকা জলবন্দী হয়ে পড়ছে। এই সমস্যার সমাধান করার জন্যই ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই বুজে যাওয়া নদীখাতের আমূল সংস্কার করার কথা ভাবা হয়েছে। কেন্দ্র সেই ব্যয় ভার বহণ করবে এবং কলকাতা পুরনিগম গ্লোবাল টেন্ডার ডেকে সেই কাজ করবে। যে কাজ কতা হবে তার মধ্যে যেমন থাকছে আদি গঙ্গার পলি নিষ্কাষণ, পুরনো ভূগর্ভস্থ নিকাশির পলি নিষ্কাষণ, জিআরপি লাইনিং, প্রায় ২৩কিমি নতুন পাইপ লাইন পাতা, ৭৫টি পেনস্টোক গেট নির্মাণ, চারটি ট্রেসেল ব্রিজ নির্মাণ এবং ৩টি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা এসটিপি ও ২২টি নতুন ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কাজ। সেই সঙ্গে আদি গঙ্গার গোটা পথের দুদিকে লোহার জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে যাতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে টালি নালায় নোংরা-আবর্জনা না ফেলা যায়।