নিজস্ব প্রতিনিধি: আড়াই বছর পরে আবারও ফিরল মেট্রো আতঙ্ক। এবারেও সেই বউবাজার(Bowbazaar), এবারেও সেই দুর্গা পিতুরি লেন(Durga Pituri Lane)। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরেই এলাকার মাটি কাঁপছিল, ঘরবাড়ি কাঁপছিল। বুধ সন্ধ্যায় দুর্গা পিতুরি লেনের গোটা ২০ বাড়িতে আবারও নতুন করে ফাটল দেখা যায়। সময় যত গড়ায় সেই ফাটল আরও বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। আসেন বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়(Nayna Banerjee) ও স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে(Biswarup Dey)। রাতের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসেন মেট্রো(East West Metro) আধিকারিকরাও। এরপরেই দ্রুত ওই সব বাড়ির বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়ার কথা জানান। আর তার জেরেই বুধবার মাঝরাতেই ২০-২২টি পরিবার দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে পথে নামতে বাধ্য হন। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, দুর্গা পিতুরি লেন এলাকাটিকে পুলিশ ঘিরে রেখেছ। ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা। পাশে যে খানে মেট্রো রেলের কাজ চলছিল, সেটিও বন্ধ রাখা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই কাল চলছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর। হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া স্টেশন, ধর্মতলা, শিয়ালদা, সল্টলেক হয়ে যা গিয়েছে সেক্টর ফাইভ অবধি। সেই ইস্টওয়েস্ট মেট্রোর ফুলবাগান থেকে সেক্টর ফাইভের অংশ ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে। পুজোর মধ্যেই আশা করা হচ্ছে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়ে যাবে শিয়ালদা থেকেও। লাইন পাতার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত। কিন্তু ধর্মতলা থেকে শিয়ালদা অবধি অংশের কাজ বার বার ধাক্কা খাচ্ছে। বছর দুই আগে ২০১৯ এর আগস্ট মাসে এই বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনেই নেমেছিল ধ্বস। আর সেটাও মাটির নীচে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাণকালে। সেই সময় ওই এলাকার গোটা ৪০ বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। চোখের সামনে গোটা ১০-১২ বাড়ি হুড়মুড়িয়ে একের পর এক ভেঙে পড়ে। সেই ধাক্কায় শতাধিক পরিবার শুধু যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল তাই নয়, তাঁরা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এবারেও সেই একই ছবি ফিরল দুর্গা পিতুরি লেনে।
এবারের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরেই ওই এলাকার মাটি কাঁপছিল। ঘরের ভিতরেও ছড়িয়ে পড়ছিল সেই কাঁপুনি। থর থর করে কেঁপে উঠছিল ঘরের আসবাব থেকে দেওয়াল। ভয়ে তাঁদের কার্যত জীবন যাওয়ার উপক্রম হয়। বুধবার সকাল থেকেই একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। সময় যতই গড়ায় সেই ফাটল যেমন আরও বাড়তে থাকে তেমনি আর নতুন নতুন বাড়িতে ও জায়গায় ফাটল দেখা দিতে থাকে। ফাটল চখে পড়ে এলাকার রাস্তাতেও। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে কলকাতা পুরনিগমের কর্মীরা। আসে পুলিশ। আসেন নয়না ও বিশ্বরূপ। পুরকর্মীরাই মাইকে করে দ্রুত এলাকাবাসীদের বাড়ি ছাড়তে বলেন। তার জেরে মাঝরাতেই বহু পরিবার বাড়ি ছাড়েন। মেট্রোর আধিকারিকেরাই তাঁদের হোটেল থাকার ব্যবস্থা করে দেন। অনেকেই আবার এদিন ভোর পর্যন্ত রাস্তার ফুটপাতে বসে থাকতে দেখা যায়। ঘরের জিনিস ঘরে রেখেই প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি খালি করে খোলা আকাশের নিচে যেতে বাধ্য হয়েছে বেশ কিছু পরিবার।
বুধবার রাতেই ইস্ট ওয়েস্ট মেট্র প্রকল্পের নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কেএমআরসিএল সংস্থার প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিন সকালেই সেখানে তাঁদের ইঞ্জিনিয়ারদের আসার কথা। কী কারণে এবারে এই ফাটল দেখা দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে এদিন সকাল থেকেই। স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে’র অভিযোগ করেন, কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই মেট্রো রেল কাজ করছে, তার ফলেই এই ফাটল দেখা দিয়েছে। অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে এখন বউবাজারে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চলেছে। সেই কাজও প্রায় শেষের দিকে। আগেই সুড়ঙ্গ খননকারী দুই টিবিএম ঊর্বি এবং চণ্ডী দুটোই খণ্ড খণ্ড করে কেটে তোলা হয়েছে। এখন মেট্রো টানেলজুড়ে কংক্রিটের কাজ চলছে। তবে কী কারণে ওই মাটির ওপর চাপ পড়ল তা দেখা হচ্ছে। এর আগে ২০১৯ সালে যাদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলি নতুন করে এখন গড়ে দিচ্ছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি।