নিজস্ব প্রতিনিধি: সময় যতই গড়াচ্ছে পুলিশি তদন্তে ততই একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে উঠে আসছে অনুপম দত্তের(Anupam Dutta) খুনের ঘটনায়। গত রবিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার পানিহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল(TMC) কাউন্সিলর অনুপম দত্তকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে মাথায় গুলি করে খুন করে ভাড়াটে খুনি শম্ভুনাথ পন্ডিত ওরফে অমিত(Amit Pandit)। সেদিন রাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে এলাকারই একটি হোগলা বন থেকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সেই অমিতকে জেরা করে পুলিশ যে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য পাচ্ছে তাই নয়, কার্যত মূল অভিযুক্তকেও নিজেদের হেফাজতে নিতে পেরেছে। অনুপম দত্তের খুনের ঘটনায় পুলিশ অমিত সহ এখনও পর্যন্ত মোট ৭জনকে আটক করেছে। যার সর্বশেষ সংযোজন স্থানীয় বিজেপি কর্মী তথা ঠিকাদার সঞ্জীব পণ্ডিত(Sanjib Pandit) ওরফে বাপি। আর সেই ঘটনা সামনে আসতেই এখন তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি(BJP) নেতৃত্ব। কেননা রবিবার থেকেই তাঁরা ঘটনাটি তৃণমূলের গোষ্ঠোদ্বন্দ্ব হিসাবে দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন গোটা ঘটনা ব্যুমেরাং হয়ে তাঁদের দিকেই ধেয়ে চলেছে।
মঙ্গলবার সকালেই পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা থেকে সঞ্জীবকে আটক করে পুলিশ। সম্পর্কে সে অমিতের মামাতো ভাই। অমিতকে জেরা করেই সঞ্জীবের নাম পায় পুলিশ। কালনা থেকে আটক করে ব্যারাকপুরে এনে দফায় দফায় জেরা করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সঞ্জীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই নিয়ে অনুপমবাবুর খুনের ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যা দাঁড়ালো ২। আটক ৫জন। বুধবারই সঞ্জীবকে আদালতে পেশ করতে চলেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, সঞ্জীবের সঙ্গে অনুপমের বিবাদ দীর্ঘদিনের। সে পানিহাটি পুরসভায় পূর্ত বিভাগের ঠিকাদার হিসাবে কাজ করত। কিন্তু তার মূল লক্ষ্য ছিল পানিহাটিতে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। স্থানীয় একটি ক্লাব সংলগ্ন জমির বিষয় নিয়ে অনুপম ও সঞ্জীবের বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল। সঞ্জীব তখন শাসকদলের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও অনুপম তার কাজে সহমত হতেন না, বিরোধিতা করতেন। কার্যত টাকার জোরে সঞ্জীব এলাকার ক্ষমতা হাতে রাখার চেষ্টা করত। কিন্তু সেই পথে অন্যতম বাধা ছিলেন অনুপম। নিজের জায়গা করতে না পেরে শেষে বিজেপিতে যোগ দেয় সঞ্জীব। এই তথ্য সামনে আসতেই অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। কেননা অনুপমবাবুর স্ত্রীর দাবি, সঞ্জীব একা নয় তার পিছনে রয়েছে বিজেপির একাধিক মাথা।
পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই অনুপমকে খুন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সঞ্জীব। তার জন্য সে এক সুপারি কিলারকে চার লক্ষ টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ হচ্ছিল না। আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছিল না সে। তখন সঞ্জীবের নির্দেশে অমিত হরিণঘাটার মোল্লাবেলিয়া গুলি চালায় সেই সুপারি কিলারের ওপরে! তবে প্রাণে বেঁচে যায় সে। এর পরে এলাকা থেকে উধাও হয়ে যায় অমিত। তার খোঁজ শুরু করে হরিণঘাটা থানার পুলিশ। কিন্তু বর্ধমান, কালনা, মেমারি, বিহারে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল অমিত। রবিবার রাতের ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই অমিতকে চিনতে পারেন হরিণঘাটার লোকজন। বিষয়টি জানতে পারেন ব্যারাকপুরের তদন্তকারীরাও। সেদিন রাতেই অবশ্য ধরা পড়ে অমিত। আর তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে সঞ্জীব অমিতকেও ৪ লক্ষ টাকার বরাত দিয়েছিল সঞ্জীব। কাজের আগে তার হাতে ১ লক্ষ টাকাও দেয় সে। বাকি টাকা কাজ শেষ হওয়ার পরে দেওয়ার কথা ছিল। পুলিশ এটাও জানতে পেরেছে যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অমিত গুলি করে অনুপমবাবুকে সেই অস্ত্র সে কিনা আনে মুঙ্গের থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে। সেই বন্দুকই সে ব্যবহার করেছিল হরিণঘাটার ঘটনাতেও। এদিকে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতেই অনুপমবাবুর স্ত্রী মীনাক্ষী দত্তকে ফোন করে কথা বলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পরিবহণ, আবাসন এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিন তিনি অনুপমবাবুর বাড়িতেও যেতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।