নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে, ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’। বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশের আধিকারিকদের দশাও অনেকটা তেমন। দুর্গাপুজোর দ্বিতীয়া থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল ভিআইপি রোড। উল্টোডাঙা থেকে দমদম পার্ক এবং কেষ্টপুর থেকে উল্টোডাঙা পৌঁছতে দু থেকে তিন ঘন্টা সময় লেগেছিল। কিন্তু সপ্তমীর রাত পর্যন্ত টনকই নড়েনি বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের। কার্যত নির্লিপ্তই ছিলেন তাঁরা। আর তাঁদের সেই নীরব দর্শকের ভূমিকায় শুধুমাত্র পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেরনো লক্ষ লক্ষ দর্শকই নয়, হাজার-হাজার নিত্যযাত্রীকেও বাড়ি ফিরতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে।
অষ্টমীর দিন রাতে তো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছিল। ভিআইপি রোডের ইতিহাসে বেনজিরভাবে বাস ও গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। আচমকাই কেন ভিআইপি রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ল, তার জবাবে ছেঁদো যুক্তি হাজির করেছেন বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশের ডিসি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘অষ্টমীর রাতে অত্যধিক ভিড় হয়েছিল। তাই ভিআইপি রোডের উপরে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়াতে বিপত্তি।’ অত্যধিক ভিড় নামক এক বায়বীয় তত্ত্ব হাজির করে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তাদের কাঁধে দায় চাপিয়ে তিনি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দমদম পার্ক থেকে শ্রীভূমি পর্যন্ত পুজো মণ্ডপগুলোতে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়েছে। বিগত বছর গুলিতে শ্রীভূমির পুজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের গাড়ি গোলাঘাটার কাছাকাছি পার্কিং করাতে হতো। কিন্তু এবার উল্টোচিত্র। লেকটাউন ও শ্রীভূমির মুখের সামনেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল ট্র্যাফিক পুলিশ। শুধু তাই নয়, ট্র্যাফিক পুলিশের সামনেই যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলানামা করিয়েছে অটো রিকশা, ক্যাব চালকরা। পুলিশকে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে একই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা, পরস্পর বিরোধী সিগন্যাল দেখিয়ে যানজট আরও পাকিয়ে দিয়েছেন। আগের বছরগুলিতে শ্রীভূমি বাস স্টপেজে কোনও বাস কিংবা গাড়িকে দাঁড়াতে দিত না পুলিশ। পুজো দেখতে হলে বাঙুর কিংবা গোলাঘাটায় নামতে হতো। এবার শ্রীভূমি স্টপেজে বাস-অটো দাঁড় করানোর অবাধ ছাড়পত্র দিয়েছিল বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশ।
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে দ্বিতীয়া থেকে শ্রীভূমিতে ভিড় উপচে পড়েছে, সেখানে কেন পরিস্থিতি সামলাতে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না? কেন অন্তত পুজোর দিনগুলিতে কেষ্টপুর থেকে উল্টোডাঙা পর্যন্ত অটো চলাচল বিকালের পরে বন্ধ রাখা হল না? কেন এয়ারপোর্ট থেকে উল্টোডাঙা হয়ে বাইপাস ধরে চলা বেশ কিছু বাস রুট ঘুরিয়ে দেওয়া হল না?
শুধু পুজোর সময়েই নয়, বছরের অন্যান্য সময়ে যাঁরা বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশের আওতায় থাকা যশোর রোড ও ভিআইপি রোড ধরে যাতায়াত করেন, তাঁদের নিয়মিতই তীব্র যানজট পোহাতে হয়। অষ্টমীর রাতে নিউটাউন হয়ে যাঁরা বাড়ি ফিরেছেন তাঁদের নবাবপুর থেকে চিনারপার্ক পৌঁছতে এক ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে। ভিআইপি রোড অবরুদ্ধ হওয়ার পিছনে বিধাননগরের ট্র্যাফিক পুলিশের ডিসির ছেঁদো যুক্তি শুনে তাঁরা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, নিউটাউনের রাস্তায় তো পুজো দেখতে মানুষের ভিড় হয় না, তাহলে কেন সেখানেও দীর্ঘ যানজট। নিত্যযাত্রীরা রসিকতা করে বলছেন, বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশ আর যানজট সমার্থক হয়ে উঠেছে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশে মতো দক্ষ বাহিনীর হাতে ভিআইপি রোডের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ভার না দেওয়া পর্যন্ত এমন যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে। এটাই ভাগ্য।’