নিজস্ব প্রতিনিধি: চাল চুরি থেকে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, কম ছাত্রকে খাইয়ে বেশি ছাত্র দেখানোর মতো নানা অভিযোগ উঠছে বাংলার(Bengal) নানা প্রান্ত থেকে। যে প্রকল্প ঘিরে এই অভিযোগ উঠছে তার নাম প্রধানমন্ত্রী পোষণ যোজনা(PM Poshan Scheme), পাতি বাংলায় প্রধানমন্ত্রী পুষ্টি প্রকল্প। আর সেই সব অভিযোগের জেরেই কেন্দ্র সরকারের শিক্ষামন্ত্রক(Education Ministry) এবার এই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধি দল(Central Delegates Team) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের স্কুলে-স্কুলে অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়ুয়াদের পুষ্টি জোগানোর জন্য এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ঠিক কোন ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখবেন এই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। খতিয়ে দেখবেন যে সব অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক না বানানো। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রকের বৈঠকের যে নির্যাস আপলোড হয়েছে ওয়েবসাইটে, সেখানে পিএম পোষণ যোজনায় কেন্দ্রীয় তদারকিতে মন্ত্রকের অফিসার, বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্প দেশজুড়ে কেমন চলছে, তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা, নানা স্কুলে পরিদর্শনেও যাবেন। তার মধ্যে প্রথমি থাকছে বাংলার নাম।
আরও পড়ুন মোদি আসার আগেই ৭০০ কোটি টাকা এল বাংলায়
তবে কেন্দ্রের এই প্রকল্প নিয়ে আগে থেকেই মোদি সরকারের সঙ্গে বিবাদ রয়েছে রাজ্য সরকারের। সেই বিবাদের নেপথ্যে রয়েছে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থের পরিমাণ যা খুবই কম। সম্প্রতি আরও এক দফায় বরাদ্দ বৃদ্ধির পরেও প্রাথমিকে পড়ুয়া-পিছু এই প্রকল্পের মিলে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ৫ টাকা ৪৫ পয়সা, উচ্চপ্রাথমিকে ৮ টাকা ১৭ পয়সা। এই টাকার ৬০ শতাংশ বরাদ্দ করে কেন্দ্র, বাকি ৪০ শতাংশ আসে রাজ্যের তহবিল থেকেই। এই যৎসামান্য বরাদ্দে আদৌ পড়ুয়াদের মুখে একটা সেদ্ধ ডিমও তুলে দেওয়া যায় কিনা, এই প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর(Bratya Basu) তাই এই প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ মন্তব্য,’মিড-ডে মিলে যা বরাদ্দ কেন্দ্রীয় সরকার করে, তাতে শিশুদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়াটাই মস্ত চ্যালেঞ্জ। তার পরেও অতিমারীকালে এবং তার পরবর্তীতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবং শিক্ষকসমাজের সহযোগিতায় স্কুল বন্ধ থাকাকালীনও রাজ্যের পড়ুয়ারা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মিল পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তদারকির নাম করে কেন্দ্রের খবরদারি সাজে না। প্রান্তিক শিশুদের জন্যে কতটা যৎসামান্য বরাদ্দ করে তারা ছড়ি ঘোরাতে চাইছে, সেটা অনুধাবন করা উচিত কেন্দ্রের।’
আরও পড়ুন টাকা ফেরাতেই হবে, কোনও ছাড় নয়, কড়া নির্দেশ আবাসে
যদিও ব্রাত্যের অভিযোগ নস্যাৎ করে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের(Subhash Sarkar) বক্তব্য, ‘সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ রয়েছে এই প্রকল্পে। দেশজুড়ে ১২ কোটি ছাত্রছাত্রী প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এই প্রকল্পে দুর্নীতি বা অন্য যে কোনও রকমের অভিযোগ যদি আমরা পাই তাহলে ছেড়ে কথা বলা হবে না। বাংলা সহ একাধিক রাজ্য থেকে ভুরি ভুরি অভিযোগ এসেছে। তাই প্রতিনিধি দল এসে খতিয়ে দেখবেন সে সব সত্যি না মিথ্যা। দুর্নীতি না হলে ভয় কেন?’ যদিও নবান্নের আধিকারিকদের একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, দুর্নীতির অভিযোগ তুলিয়ে একশো দিনের কাজ বা আবাস যোজনার মতো এ ক্ষেত্রেও বরাদ্দ কমিয়ে বা পুরোপুরি রাজ্যের ঘাড়ে তা চাপিয়ে দায় এড়াতে চাইছে না তো কেন্দ্র? কারণ ইতিমধ্যে সোশ্যাল অডিট করা, ৭৫ শতাংশ টাকা খরচ না করলে পরের কিস্তির টাকা না দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। কার্যত সেই অভিযোগকেই আরও মান্যতা দিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দাবি, ‘বেছে বেছে অবিজেপি রাজ্যগুলিকে বঞ্চিত করতেই কেন্দ্র নানা প্রকল্পে এই সব দল গঠন করছে। আত্মপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’
আরও পড়ুন মোদির বারাণসী ও মমতার কলকাতাকে জুড়বে নয়া বন্দে ভারত
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও শিক্ষকদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁদের দাবি, স্কুলস্তরে, ব্লক বা জেলাস্তরে, এমনকী রাজ্যস্তরেও একাধিক অডিট হচ্ছে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে। জেলাশাসক, এসআই থেকে এসডিও, ইদানীং পুরসভা-পঞ্চায়েতগুলিও আলাদা করে এই প্রকল্পে নজরদারি চালাচ্ছে। এর পরেও পোর্টালে এসএমএসের মাধ্যমেও ওই সব তথ্য পাঠাতে হয়। সর্বোপরি একাধিক খাতাও লিখে রাখতে হচ্ছে। সামান্য এই বরাদ্দের জন্যে আর কত এজেন্সির র্যাডারের মধ্যে দিয়ে তাঁদের যেতে হবে!