নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলা। চৈত্রের সংক্রান্তিতে এই মেলা হয়। পুরানো কলকাতা তখন এই চড়ক মেলা শুরু হয়েছিল বাগবাজারে। তারপরে স্থানান্তরিত হয় কোম্পানি বাগানে বিডন স্ট্রিট অঞ্চলের সন্নিকটে। বর্তমানে এই মেলা ছাতুবাবুর বাজারে (Chatubabur Market)হয়ে চলেছে ।আনুমানিক ২৪০ বছরের পুরোনো এই মেলা। হরেক রকমের পসরা নিয়ে মেলা বসে। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। কলকাতার বিভিন্ন দিকের এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও এই মেলা দেখতে আসে বহু মানুষজন।ইংরেজ আমলে এই মেলা দেখতে প্রচুর মানুষ ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও এসেছে বলে জানান বর্তমান মেলা কর্তৃপক্ষ। চড়ক মেলাতে এবার ১২ জন সন্ন্যাসী অংশগ্রহণ করেছেন ।তাদের মধ্যে ৯ জন সমগ্র প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করে ।গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। শনিবার শেষ হয়। বিশেষ একটি গাছ জলের তলায় রাখা হয়েছে। গাছটার বয়স আনুমানিক ২৫০ বছর। এই মেলায় যান রাজ্যের মন্ত্রী এবং শ্যামপুকুর কেন্দ্রের বিধায়ক শশী পাঁজা(Sashi Panja)। গোটা মেলা কে ঘিরে নিশ্চিদ্র পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
এদিকে,মহাসমারোহে সাথে সারা বাংলা জুড়ে পালিত হচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রচলিত লোক উৎসব ঐতিহ্যে , সংস্কৃতি গাজন উত্সব মাতোয়ারা সন্নাসীরা থেকে সাধারণ মানুষ সকলে।শিবের গাজনে দু’জন সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সেজে এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতির সং সেজে নৃত্য করতে থাকেন গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রনা দিয়ে ইষ্ট দেবতাকে সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা করেন।চৈত্রসংক্রান্তির একমাস পূর্বে তাঁরা ক্ষৌরকর্ম দ্বারা পবিত্র হন অনেকে তাঁদের ক্ষৌরকর্মের নাম সাতের কামান।তবে এখন কেউ কেউ চৈত্র সংক্রান্তির সাত বা তিনদিন আগে ক্ষৌরকর্ম দ্বারা পবিত্র হয়ে সন্ন্যাস নিয়ম পালন করেন।ধর্মের গাজনের বিশেষ অঙ্গ হল নরমুণ্ড বা গলিত শব নিয়ে নৃত্য বা মড়াখেলা কালিকা গাজনের মূলত তিনটি ভাগ থাকে – সন্ন্যাস, নীলব্রত এবং চড়ক ডোম , গোপ , কৈবর্ত ইত্যাদি সম্প্রদায় গাজনে মূল সন্ন্যাসীর ভার গ্ৰহণ করেন। সন্ন্যাস নিয়ম পালনের মূল কাজ হলো মাধুকরী বৃত্তি। সারাদিন উপবাস থেকে গৃহে গৃহে ঘুরে যে ভিক্ষা পাওয়া যায় তাই শিবকে উৎসর্গ করে ,খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। গাজন সন্ন্যাস নিয়মে তারা শাস্ত্রীয় ব্রাহ্মণের ন্যায় পৈতা গ্রহণ করেন স্নান করে গৈরিক বসন ধারণ করেন তাঁরা তারপর মোটা পৈতে পড়েন।পৈতের নীচে কুশ বাঁধা থাকে এসকল সন্ন্যাসীদের বলা হয় ভক্ত্যা।
নিয়ম পালনের সময় প্রতিটি গাজন সন্ন্যাসী নিজস্ব গোত্র ত্যাগ করে শিব গোত্র ধারণ করেন অর্থাৎ সকল ভক্তের মাঝে এই সময় শিব ভক্তময় এবং ভক্তগণ শিবময় হয়ে ওঠেন।প্রতি গাজন সন্ন্যাসী দলে একজন করে ভক্ত্যা থাকেন তাঁর নির্দেশে বাকি ভক্ত্যারা আপন আপন পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করে গাজনের কয়েকদিন ব্রহ্মচর্য পালন করে থাকেন।নারী ,পুরুষ উভয়েই গাজনের ভক্ত্যা হন পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে শিবের উপাসক বাণ রাজা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের গায়ের রক্ত দিয়ে নৃত্যগীত পরিবেশন করেছিলেন তাই শৈব সম্প্রদায়ের ভক্তগণ শিবের প্রীতির জন্য আত্মনির্যাতন করে গাজন উৎসবের আয়ােজন করেন আগে সমাজের পতিত ব্রাহ্মণেরা গাজন পুজো করতেন।
এই পূজার বিশেষত্ব হল কুমীর পুজো, খেজুর গাছে উঠে কাটা ভাঙা ও নাচা, জ্বলন্ত কয়লার ওপর খালি পায়ে হাঁটা, কাঁটা ভাঙা, বঁটির ওপর ঝাঁপ দেওয়া, পেটের উপর ফল কাটা, রাম দার দা এর উপর ওঠা, কাচ চিবানো, সর্বাঙ্গে বাণ ফোঁড়া, চড়ক গাছে ঝোলা ইত্যাদি।সকাল থেকে গাজনের সন্ন্যাসীরা মাগনে বের হন পোড়া মাটির পাত্র বা গেরুয়া ঝুলি নিয়ে দিনান্তে ভিক্ষার অন্ন মহাদেবকে উৎসর্গ করে একপাকে হবিষ্যান্ন গ্রহণ করেন সন্ন্যাসীরা।ঠিক তেমনি গাজন উৎসবের এর চিত্র আমাদের ক্যমেরায় ধরা পরল হবিবপুর ছাতিমতলা ময়দানে চন্দেরশ্বর বাবার সন্ন্যাসদের দেখা গেল তাদের উদ্যোগ চলছে গাজন উৎসব পাশাপাশি এলাকাবাসীরা এই গাজন উৎসবে মেতে উঠেছে।সকালে পাঠ ঠাকুর মাথায় করে ঢাক, কাসর বাজিয়ে বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি ঘুরে দুধ গঙ্গা জল ফুল ফল সিঁদুর দিয়ে পূজা নেওয়া ও চাল পয়সা,তোলা।পাশাপাশি বিশেষ পুজা অর্চনা পর প্রথমে কাটা ভাঙা, কাচ চিবানো থেকে শুরু করে জলন্ত আগুনের উপর দিয়ে হাঠা সহ, রাম দা এর উপর ওঠা শরীরের উপর ফল কাটা, ব্রত পালন পাশাপাশি পুজো অঞ্জলী দেওয়া ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ।