নিজস্ব প্রতিনিধি: পরিস্থিতি যে ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেটা বুঝেই এবার মুখ খুললেন দিলীপ ঘোষ। আর সেটাও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে। সোম সকালে দিলীপ বার্তা দিলেন মতুয়াদের, বার্তা দিলেন শান্তনু ঠাকুরকেও। যদিও মতুয়া মহলের পাল্টা দাবি, শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। কেন্দ্র সিএএ দ্রুত লাগু করুক। আর এই বার্তা পাল্টা বার্তার মধ্যে এখন নিজেদের লাভের হিসাব করছে রাজ্যের শাসক দল। কেননা বিজেপি ভোট ভাগ হলে আখেরে লাভ হবে তাঁদেরই। বিশেষ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হাতে থাকা আসনগুলি উদ্ধারের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই লাভদায়ী হয়ে উঠতে পারে।
বঙ্গ বিজেপিতে কদর কমেছে, গুরুত্ব কমেছেন মতুয়াদের। দলের নতুন রাজ্য কমিটি থেকে শুরু করে জেলা কমিটি মায় মণ্ডল কমিটিতেও গুরুত্ব পাননি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তিনি আবার মতুয়া সঙ্ঘের প্রধানও। একই অবস্থা মতুয়া সমাজ থেকে বিজেপির নেতা বা বিধায়ক হিসাবে উঠে আসা ব্যক্তিত্বদের। তার জেরেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে মতুয়ামহলে। এই ক্ষোভের পিছনে আবার কাজ করছে সিএএ লাগু না হওয়ার বিষয়টিও। কেননা মতুয়ারা দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিকত্বের দাবিতে সরব। সিএএ লাগু হলে সেই দাবি মিটবে একথা অমিত শাহ নিজে বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন বাংলার বুকে এসে। একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদিও। কিন্তু উনিশের ভোটে জিতেও সিএএ লাগু করতে পারেনি মোদি সরকার। এমনকি এই আইন লাগু করার জন্য সহায়ক আইনও এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি মোদি সরকার। এদিকে সামনে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন। এখন মতুয়াদের অনেকেই মনে করছেন বিজেপি আদতে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে ব্যবহার করছে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তাই মতুয়াদের অনেকেই এখন বিজেপি বিমুখ হতে শুরু করে দিয়েছেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রমাণ মিলেছে।
পিছন থেকে মতুয়া ভোট সরে যেতেই ঘুম ছুটেছে শান্তনু সহ বিজেপির মতুয়া নেতা থেকে বিধায়কদের। তার জেরেই শোনা গিয়েছিল এরাও তৃণমূলের পথে পা বাড়াতে পারেন। সেই আবহেই বঙ্গ বিজেপিতে কদর ও গুরুত্ব কমেছে মতুয়াদের। তার জেরে এখন ক্ষোভ ছড়িয়েছে মতুয়া মহলের গেরুয়া শিবিরে। সূত্রে জানা গিয়েছে, বঙ্গ বিজেপিকে শিক্ষা দিতে শান্তনু ঠাকুর এখন মতুয়াদের জন্য আলাদা রাজনৈতিক দল গড়তে চলেছেন। একই সঙ্গে জেলায় জেলায় মতুয়াদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করাতে চাইছেন সিএএ দ্রুত লাগু করার দাবি নিয়ে। সন্দেহ নেই ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মতুয়াদের এই আন্দোলন ও শান্তনুর পদক্ষেপ অনেকটাই চাপে ফেলে দেবে বিজেপিকে। এই অবস্থায় মতুয়া ও শান্তনুকে কিছুটা হলেও শান্ত করতে চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই কারনেই তাঁরা দিলীপ ঘোষকে নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে বিশেষ বার্তা দিতে। কার্যত ইচ্ছাকৃত ভাবেই দিলীপকে দিয়ে সেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে কেননা দিলীপকে নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধদের নিয়ে। বরঞ্চ ক্ষোভ রয়েছে সুকান্ত মজুমদার, শাভেন্দু অধিকারী ও অমিতাভ চৌধুরীকে নিয়ে।
সোমবার সেই সূত্রেই দিলীপ জানিয়েছেন, ‘শুধু মতুয়ারা নন, বিজেপি আমলে সবাই নাগরিকত্ব পাবেন। সিএএ করতে অনেক সময় লেগেছে। আপনাদের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। বিজেপি কাজটা করছে। বাংলায় প্রায় তিন কোটি মানুষ আছেন, যাঁরা পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কথার উপর ভরসা রেখে তাঁরা বিজেপি-কে ভোট দিয়েছেন। অর্ধেক কাজ হয়েছে। অর্ধেক হয়নি। তার জন্য সময় দিতে হবে। একমাত্র বিজেপি-ই পারবে এই কাজ করতে। আগামী লোকসভা ভোটের আগে সিএএ কার্যকর হয়ে যাবে।’ তবে দিলীপের এই বার্তার পরেও মতুয়াদের মধ্যে যে ক্ষোভ কমেনি তার আঁচ মিলেছে বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কথায়। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিজেপি আইন করেছে। তারা নাগরিকত্ব দেবে বলেছিল। কেন দিতে পারেনি, তা ওরাই বলতে পারবে। মতুয়ারা এ দেশের নাগরিক। তাঁরা ভোট দেন। নতুন করে তাঁদের নাগরিকত্বের প্রয়োজন নেই।’ মমতাবালার মতে বিজেপি মতুয়াদের শুধু যে বিভ্রান্ত করছে তাই নয়, তাঁদের সঙ্গে প্রতারণাও করছে।