নিজস্ব প্রতিনিধি: স্কুল সার্ভিস কমিশনের মামলায় চাঞ্চল্যকর মোড়। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল এদিন দুপুর ৩টের মধ্যে শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতেই হবে। প্রয়োজনে সিবিআই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারে বলে জানিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু এদিন বিকালে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, শান্তিপ্রসাদ সিনহা সহ এসএসসি’র ৫ উপদেষ্টাকে সিবিআই জেরা করতে পারলেও তাঁদের কাউকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে না। আর সেটাই কার্যত স্বস্তি হয়ে দাঁড়াল স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন ৫ উপদেষ্টার কাছেই। তবে ডিভিশন বেঞ্চ এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, উপদেষ্টাদেরও সিবিআই-কে সহযোগিতা করতে হবে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-ডি পদে ৯৮জনের নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তার জেরে মামলাও দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। আর সেখানেই এসএসসি’র প্রাক্তন উপদেষ্টামণ্ডলীর ৫জন সদস্যের ভূমিকা উঠে আসে আতসকাঁচের তলায়। তার জেরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছিলেন ওই ৫ সদস্যকেই জেরা করবে সিবিআই। সেই জেরা নিয়েই শুরু হয় টানাপোড়েন। উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিনহা এর আগে ওই নির্দেশের জেরে হাজিরা দিয়েছিলেন সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে। সোমবার হাজিরা দেব বাকি ৪ সদস্যও। কিন্তু ওই ৫জনই কলকাতা হাইকোর্টের একের পর এক ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানিয়ে গিয়েছিলেন যাতে তাঁরা সিবিআই-য়ের জিজ্ঞাসাবাদের হাত থেকে ছাড় পান। ডিভিশন বেঞ্চ যেন সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু গতকাল থেকেই দেখা গিয়েছে একের পর এক ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করতে চায়নি। মোট ৪টি ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা শুনতে চায়নি।
শেষে এদিন বিকালে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা শুনতে রাজি হয়। তার জেরেই এদিন ওই মামলার শুনানি হয়। সেখানেই ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছে তার সব কিছুই বহাল থাকবে। কেবল শান্তিপ্রসাদ সহ উপদেষ্টামণ্ডলীর ৫ সদস্যকে প্রয়োজনে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল সেই নির্দেশটির ওপর তাঁরা স্থগিতাদেশ দিচ্ছেন। অর্থাৎ শান্তিপ্রসাদ সহ উপদেষ্টামণ্ডলীর ৫ সদস্যকে সিবিআই-য়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তেই হবে। তাঁদের হাজিরা দিতেই হবে সিবিআই-য়ের নিজাম প্যালেসের কার্যালয়ে। সেই জিজ্ঞাসাবাদে সিবিআই-কে সহযোগিতাও করতে হবে তাঁদের। কিন্তু সিবিআই এখনই কাউকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে না। অর্থাৎ তাঁরা এসএসসি’র কোনও কর্তাকেই গ্রেফতার করতে পারবে না। কার্যত এই রক্ষাকবচ পাওয়ার পরেই এদিন শান্তিপ্রসাদ বিকাল ৫টা নাগাদ নিজাম প্যালেসে সিবিআই-য়ের কার্যালয়ে হাজিরা দেন। একই সঙ্গে সিবিআই-য়ের তরফে যে ৯৮জন গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৫জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার তোড়জোরও শুরু হয়ে গিয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ এদিনই দিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ।