নিজস্ব প্রতিনিধি: ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর(East West Metro) কাজ চলাকালীন সময়ে মধ্য কলকাতার বউবাজার(Bowbazaar) এলাকায় দুর্গা পিতুরি লেনে(Durga Pituri Lane) ২০১৯ সালে প্রথমবার ধ্বস জনিত বিপর্যয় নেমে এসেছিল। সেই ঘটনার পরে প্রায় দুই বছরের মাথায় ফের ধ্বস আতঙ্ক ফিরে এসেছে দুর্গা পিতুরি লেনে। কেননা গত বুধবার থেকে ফের ওই এলাকার একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকার ৮২টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ায় হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় পরিদর্শনে যান রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম(Firhad Hakim)। সেই সময়েই তিনি জানিয়েছিলেন নতুন করে যে বাড়িগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেগুলি খতিয়ে দেখবে কলকাতা পুরনিগমের(Kolkata Municipal Corporation) একটি বিশেষজ্ঞ দল। তাঁরা সব কিছু খতিয়ে দেখে ওই এলাকার কোন কোন বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নিয়ে পুরনিগমকে একটি রিপোর্ট দেবেন। বৃহস্পতিবার রাতেই সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রিপোর্টে দুর্গা পিতুরি লেনে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থ ১৪টি বাড়ি ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়রের নির্দেশ মতো পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা গতকাল দুর্গা পিতুরি লেনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িগুলি পরিদর্শন করে। তারপর রাতেই তাঁরা রিপোর্ট জমা দেন মেয়রের কাছে। সেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত ১৪টি বাড়ি ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। তবে এখনই সেই রিপোর্ট মেনে বাড়ি ভাঙার পথে এগোচ্ছে না পুরনিগম কর্তৃপক্ষ। বাড়ি ভাঙা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে ওই সব ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িগুলি ও ওই এলাকার মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চাইছেন মেয়র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট দেখেই তারপর বাড়িগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা পুরনিগম। নবান্ন সূত্রে খবর, দুর্গা পিতুরি লেনে কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগ থেকে মেয়রকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে সেই রিপোর্ট ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও জমা পড়েছে। একই সঙ্গে দুর্গা পিতুরি লেনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এদিন অর্থাৎ শুক্রবার ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণকারী সংস্থা কেএমআরসিএল-এর আধিকারিকদের সঙ্গে একট বৈঠক করবেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। যদিও এদিন সকালে কেএমআরসিএল জানিয়েছে, মেট্রোর সুড়ঙ্গের যে ১১টি জায়গা থেকে জল বেরচ্ছিল, তা বন্ধ করা গিয়েছে। তাই এখনই নতুন করে আর বিপদের সম্ভাবনা নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের বিপর্যয়ে দুর্গা পিতুরি লেনে প্রায় ৩০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার ক্ষতি হয়েছে ১৪টি বাড়ি। ২০১৯ সালের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িগুলি মেরামত করে বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনে কেএমআরসিএল। কিন্তু এখন স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে’র অভিযোগ, ‘মেট্রোর কাজে দুর্গা পিতুরি লেনের অধিকাংশ বাড়ির অবস্থাই খুব খারাপ। তাই বারবার একই ঘটনা ঘটছে। মেট্রো চালু হলে ফের বাড়িগুলির ক্ষতি হতে পারে। তাই একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা দরকার।’ তবে এরই মধ্যে সব থেকে বেশি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায় থাকা স্বর্ণশিল্প ও কারিগরদের মধ্যে। বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনে ছড়িয়ে থাকা সোনার গয়নার কাজ ঘিরেই এখন উদ্বেগ ছড়িয়েছে ব্যবসায়ী থেকে কারিগরদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকার বেশির ভাগ দোকান থেকেই সোনার গয়না ও রত্ন বের করে নিয়ে গিয়েছেন ব্যবসায়ী ও কারিগরেরা। কিন্তু তাঁরা এখন উদ্বিগ্ন বিয়ের মরশুমের জন্য অর্ডার নেওয়া গয়না তাঁরা সময়মতো ডেলিভারী দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে। সেই সঙ্গে উদ্বিগ্ন আবার কবে তাঁরা নিজেদের আগেকার জায়গায় ফিরে আসতে পারবেন তা নিয়ে।
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কর জানিয়েছেন, দুর্গা পিতুরি লেনে কোনও বড় সোনার গয়নার দোকান নেই। কিন্তু বউবাজার ও বড়বাজার থেকে শুরু করে কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় যত সোনার দোকান আছে তাঁদের বেশির ভাগ গয়না দুর্গা পিতুরি লেনের ছোট ছোট ঘরে ছড়িয়ে থাকা কারখানায় তৈরি হয়। সেই সব কাজে খুব কম করেও ৩০০ থেকে ৩৫০ শিল্পী-কারিগর জড়িত। ২০১৯ সালের বিপর্যয়ের জন্য একবার ধাক্কা খেতে হয়েছে। তারপর কোভিড ও লকডাউন। এখন আবার এই বিপর্যয়। ধাক্কা খাচ্ছে ব্যবসা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে শিল্পী ও কারিগরেরা।