নিজস্ব প্রতিনিধি: বিস্ফোরক বললেও কম বলা হয়। নিজের মুখে সংবাদমাধ্যমের সামনে স্বামী স্বীকার করছেন যে, স্ত্রী টেট(TET) পাশ করেননি। সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে শেষে চাকরি বাগিয়েছেন। আর সেই টাকা দেওয়া হয়েছে বাগদার চন্দন মণ্ডল(Chandan Mondol) ওরফে ‘সৎ রঞ্জন’কে। এই ঘটনা কার্যত রাজ্যে শিক্ষক দুর্নীতির ঘটনায় যেন নতুন এক রাস্তা খুলে দিল এটা দেখার জন্য যে এই নিয়োগ দুর্নীতিতে কীভাবে ঘুষের স্বর্গরাজ্য স্থাপিত হয়েছিল। শুক্রবার শুক্রবার প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে উল্লেখ করা হয় যে নদিয়া জেলার কল্যাণীর বাসিন্দা পাপিয়া মুখোপাধ্যায়(Papiya Mukhopadhay) ২০১৪ সালে ‘টেট’ বা শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা না-দিয়ে নগদ সাড়ে সাত লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক শিক্ষিকার চাকরি পান। টাকা নিয়েছিলেন বাগদার মামাভাগিনা গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল। সেই ঘটনা সামনে আসার পরেই এদিন পাপিয়ার বাড়িতে যান সাংবাদিকেরা। সেখানেই পাপিয়ার স্বামী জয়ন্ত বিশ্বাস বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি করেন যে, পাপিয়া টেট পাশ না করেও সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, বাগদার এই চন্দন মণ্ডল ওরফে ‘সৎ রঞ্জনের’ বিষয়টি সবার আগে সামনে আনেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন যে, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে মিডলম্যান হয়ে উঠেছিল এই রঞ্জন। সেই সূত্রেই সিবিআই(CBI) ঘটনার তদন্ত করে ও পাপিয়ার বিষয়টি গোপন সূত্রে জানতে পারে। এরপর পাপিয়ার স্বামী চন্দন মণ্ডলকে খুঁজে বের করে তার বয়ান নেন। সেই বয়ানের নথিই সিবিআইয়ের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল যার ভিত্তিতে গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। পাপিয়ার স্বামী জয়ন্ত সিবিআই আধিকারিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁরা এখন কল্যাণীতে থাকলেও তাঁদের আদি বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার বাগদা ব্লকের মামাভাগিনা গ্রামে। সেখানেই তিনি চন্দন মণ্ডলের খোঁজ পান। পাপিয়া ২০১২ সালে টেট পরীক্ষা দিলেও পাশ করতে পারেননি। ২০১৪-য় তিনি আর টেটে বসেননি। ২০১৫-র অগস্টে জয়ন্তের বাবা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী দীননাথ বিশ্বাসের পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা তুলে চন্দন মণ্ডলকে দেওয়া হয়। তার বিনিময়েই ২০১৭ সালে নদিয়ার হবিবপুরের পানপাড়া জুনিয়র প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পান পাপিয়া। এরপর এদিন জয়ন্তের বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা গেলে তিনি সেখানেই সাফ জানিয়ে দেন, বউ টেট পাশ না করেও ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়ে গিয়েছে।