নিজস্ব প্রতিনিধি: ৪ দিন ধরে জ্বলছে মণিপুর(Manipur)। হিংসায় দীর্ণ উত্তর-পূর্ব ভারতের(North East India) সেই পাহাড়ী রাজ্যে মৃতের সংখ্যা এখন সরকারি ভাবে ৬০ ছুঁইছুঁই। বেসরকারি মতে নিহতের সংখ্যা শতাধিক। হিংসায় শুধু যে ঘরছাড়া হয়েছেন এমনই নয়, কার্যত সর্বহারা হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে নেমেছে সেনা, র্যাফ, আধা সেনা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah) নিজে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সঙ্গে। এর পাশাপাশি সে রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি সামলে ওঠা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সেই রাজ্যে আটকে পড়েছেন কয়েক হাজার পর্যটক। তাঁদের মধ্যে বাংলার বাসিন্দারাও রয়েছেন। এই অবস্থায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী(Bengal Chief Minister) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) তৎপর হলেন বাংলার এই আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করতে। ট্যুইট করে সেই বার্তা তুলে ধরার পাশাপাশি ২টি বিশেষ হেল্পলাইনের নম্বরও জানালেন তিনি।
আরও পড়ুন ঝড়ের ওপর নজর রাখতে লালবাজারে খোলা হলো বিশেষ কন্ট্রোল রুম
কী লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী? শনিবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ট্যুইটে লেখেন, ‘আমরা মণিপুর থেকে যে ধরনের খবর এবং এসওএস বার্তা পাচ্ছি তাতে গভীর ভাবে ব্যথিত। আমি মণিপুরের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নাগরিকেরাও এখন সেখানে আটকে পড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দায়বদ্ধ। তাই মণিপুর সরকারের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে সেখানে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে উদ্যোগী বাংলা। মুখ্যসচিবকে পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করতে এবং দুর্দশা ও হতাশাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে আছি। সকলকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এই বার্তার পাশাপাশি তিনি ২টি হেল্পলাইন নম্বরও তুলে ধরেছেন। এই দুটি নম্বর হল 033-22143526, 033-22535185। যে কোনও রকমের সাহায্যের প্রয়োজন হলে এই দুটি নম্বরে ফোন করা যাবে। এই দুটি নম্বরই নবান্নের।
আরও পড়ুন প্রতি ৩ মাস অন্তর পঞ্চায়েত প্রধানদের কাজকর্মের মূল্যায়নের পথে তৃণমূল
কিন্তু এখনও কেন শান্ত হল না মণিপুর? সমস্যাই বা কোথায়? মণিপুরে জনসংখ্যার নিরিখে বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হল মেইতেই। তাঁরা হিন্দু এবং রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ এলাকায় তাঁরা থাকার অধিকারী। মূলত রাজধানী ইম্ফল এবং সন্নিহিত উপত্যকায় বসবাস করেন মেইতেইরা। অন্যদিকে সে রাজ্যের সংখ্যালঘু অংশ হিসাবে রয়েছে প্রায় ৩৪টি স্বীকৃত তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়। এদের বেশির ভাগ আবার খ্রীষ্টান এবং তাঁরা রাজ্যের ৯০ শতাংশ এলাকায় বসবাস করেন। মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে। মণিপুরে সংবিধানের ৩৭১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাহাড়ি অঞ্চলে শুধু এই তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদেরই বসবাসের অধিকার রয়েছে। কেবলমাত্র তাঁরাই সেখানে জমি কেনা ও বাড়ি তৈরির অধিকারী। এই ছবিটাই দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন মেইতেইরা আর তার সার্বিক ভাবে বিরোধিতা করে চলেছে তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা যাদের সিংহভাগই আবার কুকি জনজাতির। সম্প্রতি মণিপুর হাইকোর্টে মেইতেইরা একটি মামলায় তাঁদেরকেও তফশিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার আর্জি জানায়। সেই আর্জির দাবির জন্য তাঁরা তুলে ধরেছেন ২০১১ সালের জনসুমারীর পরিসংখ্যানকে খাড়া করছে।
আরও পড়ুন মহিলা যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অপরাধে ধৃত ওলার চালক
ওই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ১৯৫১ সালে মণিপুরে ৫৯ শতাংশ মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষ থাকলেও ২০১১ সালে কমতে কমতে তা ৪৪ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। এর জেরেই মণিপুর হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে সে রাজ্যের বিজেপি শাসিত সরকারকে চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু তার বিরোধিতা শুরু করে সেই কুকিরাই। তাঁদের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিসাবে এমনিতেই বহু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষরা। তাই তাদের আর আলাদা করে তফসিলি জনজাতির তকমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু তাই নয়, হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নামে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর। এরপরেই অশান্ত হয়ে ওঠে মণিপুর।