নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) দিনক্ষণ এখনও ঘোষিত হয়নি। কিন্তু সেই নির্বাচন যে আর কয়েক মাসের মধ্যেই হতে চলেছে সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই অবস্থায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC) এখন থেকেই একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আর তা হল এই নির্বাচনের পরে বাংলার যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত জোড়াফুলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বোর্ড গড়বেন সেই সব গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের কাজ প্রতি ৩ মাস অন্তর পর্যালোচনা করে দেখা হবে। কোনও পঞ্চায়েত প্রধানের নামে অভিযোগ জমা পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছুপা হবে না জোড়াফুল শিবির। পঞ্চায়েতে দুর্নীতির যে ধরনের অভিযোগ সম্প্রতি সামনে এসেছে, আগামী দিনে কোনও অবস্থায় তার পুনরাবৃত্তি চাইছে না তৃণমূল। সেই জন্যই এখন থেকে জোড়াফুল শিবির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করে দিল। অর্থাৎ বোর্ড গঠনের ৬ মাস বাদেই কিন্তু গদি যেতে পারে নতুন পঞ্চায়েত প্রধানের(Panchayat Pradhan)। কেননা নতুন বোর্ড গঠনের ৬ মাস পর পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না পঞ্চায়েত প্রধানদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের এই নতুন সিদ্ধান্তের আওতায় থাকবেন পঞ্চায়েতের দলীয় উপপ্রধানরাও।
আরও পড়ুন আবারও ২ লক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ, নজরে PMGAY
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) এখন জনসংযোগ কর্মসূচী করে চলেছেন। সেই কর্মসূচীতে নেমে তিনি নিত্যদিনই একাধিক সভা ও বৈঠকও করছেন। সেই সব সভা আর বৈঠকে তিনি কিন্তু সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘চেয়ারে বসার পর পঞ্চায়েত প্রধান যদি এলাকার মানুষের ভালোমন্দ না দেখেন, তাহলে ওই চেয়ারে বসার যোগ্যতা হারাবেন। ১০টা-৫টা অফিস টাইমের ডিউটির মতো আপনার কাজ হবে না। ২৪ ঘণ্টা মানুষের পাশে থাকতে হবে। গ্রামের মানুষ আপনাকে বাড়িতে গেলে পাবে না, ফোন করলে তুলবেন না, কোনও কাজের কথা বললে পরে করছি বলে ছেড়ে দেবেন, এসব চলবে না। তিন-চার মাস অন্তর পঞ্চায়েত প্রধানদের কাজের মূল্যায়ন হবে। নির্বাচনে দল টিকিট দিল। প্রার্থী হলেন। ভোটে লড়াই করে জিতলেনও। তারপর পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে চেয়ারে বসার পরই আপনার অন্য রূপ বেরিয়ে পড়ল। ক্ষমতা পেয়ে নিজেকে সর্বেসর্বা ভেবে ফেললেন। এই ধারণায় নিয়ে যারা চলছেন তাঁরা শুধরে যান।’ একই সঙ্গে পঞ্চায়েতের প্রার্থী নিয়েই তিনি সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘প্রার্থী(Party Candidates) পছন্দ হল না, বসে গেলাম, দলের হয়ে কাজ করলাম না, এসব চলবে না। নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর পর কোনও ‘দাদা’র পা ধরে তৃণমূলে ঢুকতে চাইলে দরজা খোলা হবে না।’
আরও পড়ুন ১ বছরে, ৩০০ কৃষকবন্ধু উপভোক্তার মৃত্যু ময়নায়, বিস্ফোরক রিপোর্ট
কার্যত অভিষেক এখন যা বলছেন সেই অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। নতুন করে পঞ্চায়েত গঠনের পর প্রধান কিংবা অন্য নির্বাচিত সদস্যদের নামে যদি কোনও অভিযোগ আসে, দল তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে। সেই পথেই এগোচ্ছে জোড়াফুল শিবির। রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলি পরিচালনায় দুর্নীতির বীজ সমূলে উৎপাটন করতে উদ্যোগী হয়েছে জোড়াফুল। বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি চারজন পঞ্চায়েত প্রধানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন বোর্ডে প্রধানদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ ওঠা বন্ধ করতে তাই এখন থেকেই পদক্ষেপ করছে তৃণমূল। যদিও তার পরেও রাজ্যের পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি পুরোপুরি ঠেকানো যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।