নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) জেলায় জেলায় সক্রিয় রয়েছে ১৯টি Mobile Tower প্রতারক গ্যাং। এমনতাই জানাল রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা CID। প্রতি মাসে তাঁরা লাখ লাখ টাকা তুলছে মানুষকে ঠকিয়ে। জালিয়াতির টাকা জমা পড়ছে ভিন রাজ্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তারপর সেই টাকার একাংশ তারা লাগাচ্ছে চোরাচালানের কারবারে। বাকি টাকা হাওলার(Hawala) মাধ্যমে পাচার হচ্ছে দুবাই বা সিঙ্গাপুরে(Singapur)। জেলায় জেলায় এই গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এবার আসরে নেমেছে সিআইডি। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, টাওয়ার গ্যাংয়ের পান্ডাদের সঙ্গে চোরাচালান চক্রের যোগ রয়েছে। প্রতারণার টাকা খাটছে সোনা, মাদক সহ বিভিন্ন সামগ্রীর চোরাচালানে। পরে ওই টাকা আবার ঘুরপথে চলে আসছে মূল প্রতারকদের কাছে। তাঁরা এটাও নিশ্চিত যে শুধু বাংলায় নয়, এই সব গ্যাংয়ের শিকড় ছড়িয়ে আছে দিল্লি, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র মায় তামিলনাড়ুর বুকেও।
আরও পড়ুন বাংলার প্রশাসনে গুরুত্ব বাড়ল অতিরিক্ত জেলাশাসকদের
তদন্তে নেমে কী জানতে পেরেছেন CID আধিকারিকেরা? জানা গিয়েছে, 4G বা 5G টাওয়ার বসানোর নাম করে রাজ্যে চলছে প্রতারণা। বাড়তি টাকা রোজগারের আশায় তাদের পাল্লায় পড়ে ঠকছেন সাধারণ মানুষ। Mobile Tower বসানোর নামে অনলাইনে ভূরি ভূরি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে নিত্যদিন সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যমে। যোগাযোগের জন্য সেখানে থাকে মোবাইল নম্বর। অনেক ক্ষেত্রে জালিয়াতরা নিজেরাও যোগাযোগ করছে। অনেকে না বুঝে তাদের টোপে পা ফেলছেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রতারিত হওয়ার পর অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এই ধরনের অভিযোগের বহর ক্রমেই বাড়ছে। একেকটি জেলায় মাসে কম করে ১০-১৫টি অভিযোগ জমা পড়ছে। তদন্তকারীরা এই সব ঘটনার তদন্তে নেমে দেখছেন প্রতারকরা যে ফোন থেকে এই কারবার চালাচ্ছে, সেই সিম তোলা হয়েছে জাল নথি দিয়ে। একেকটি গ্যাং এক জেলায় এক-দেড় মাস অপারেশন চালাচ্ছে। তারপর তারা জেলা বদল করছে। যে কারণে এই গ্যাংয়ের কাউকে সেভাবে চিহ্নিত করা যায়নি এতদিন।
আরও পড়ুন কাগজে-কলমে আছে, অথচ বাস্তবে গড়েই ওঠেনি নন্দীগ্রাম ITI
তবে এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে CID’র আধিকারিকেরা এবার বিভিন্ন জেলার পুলিশের মধ্যে সমন্বয় গড়ে দিচ্ছেন। কেননা এতদিন এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জেলার পুলিশদের মধ্যে কোনও সমন্বয় ছিল না। এমনকি পুলিশের সঙ্গে এই নিয়ে খোদ CID’র আধিকারিকদেরও কোনও যোগাযোগ ছিল না। জেলায় হওয়া জালিয়াতির কথা যেমন জানতেই পারতেন না সিআইডি আধিকারিকেরা তেমনি কোন জেলায় চক্রের কেউ ধরা পড়লে তার ছবি বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর কোনও চলও ছিল না। শুধু তাই নয়, প্রতারণার টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে তদন্তেও ঢিলেমি থেকে গিয়েছে। এখন বিষয়টি নিয়ে CID’র আধিকারিকেরা দেখছেন প্রতারণার সিংহভাগ টাকা জমা পড়ছে অন্য রাজ্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। একাধিক রাজ্যে এখনও পর্যন্ত এমন ৪৯০টি অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে। সেগুলিকে ফ্রিজ করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, ওই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। সেই টাকা খাটছে সোনা, মাদক সহ বিভিন্ন সামগ্রীর চোরাচালানে। পরে ওই টাকা আবার ঘুরপথে চলে আসছে মূল প্রতারকদের কাছে। আবার টাকার একটা অংশ হাওলার মাধ্যমে পাচার হচ্ছে দুবাই বা সিঙ্গাপুরে। এখনও পর্যন্ত ১৯টি গ্যাংকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন তাঁরা। তাদের বেশ কয়েকজন পান্ডাকেও ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কাউকেই এখনও ধরতে পারেননি তাঁরা।