নিজস্ব প্রতিনিধি: বাম ছেড়ে তিনি এসেছিলেন ডানে। হাতের লাল পতাকা ছেড়ে তুলে নিয়েছিলেন জোড়া ঘাসফুলের পতাকা। হয়েছিলেন মন্ত্রীও। কিন্তু সব কিছু ঘেঁটে ‘ঘ’ করে দিল আদালতের এক মামলা। সেই মামলার জেরেই মেয়ের চাকরি তো গিয়েইছে, সঙ্গে চাকরির সূত্রে পাওয়া বেতনের সব টাকাতাই ফেরত দিয়ে দিতে হবে। আর এই ঘটনায় সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন তিনিও। আরও বড় কথা বাম ছেড়ে যে দলে এসেছেন সেই তৃণমূলের সঙ্গেই এখন তাঁর নিত্যদিন দূরত্ব বেড়ে চলেছে। কার্যত তৃণমূলে তিনি এখন চূড়ান্ত রকমের ব্রাত্য। তারই নমুনা মিলল মঙ্গলবার। এদিন আলিপুরদুয়ার(Alipurduyar) জেলায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) একটি কর্মীসভা রয়েছে। সেই সভায় যোগ দেওয়ার ডাক পাননি তিনি। আগামিকালও মুখ্যমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানেও ডাক পাননি তিনি, মানে শ্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী(Paresh Chandra Adhikari)। রাজ্যের মাননীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
তৃণমূলের(TMC) অন্দরে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে জোড়াফুলে দিন ফুরোচ্ছে পরেশের। এসএসসি বিতর্ক একটু থিতু হলেই মন্ত্রীত্ব যাচ্ছে পরেশের, এমনটাই দাবি জোড়াফুল নেতাদের। সেই দাবি যে খুব একটা অমূলক নয় তার নমুনাও মিলছে বিস্তর। পর পর দুটি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেননি পরেশ। কেউ তাঁকে ডাকেনি সেই বৈঠকে যোগ দিতে, কেন যোগ দেননি সেই নিয়েও কেউ ফোন করে কিছু জানতে চাননি। বস্তুত তৃণমূলের সঙ্গে পরেশের এখন আর কোনও যোগ নেই বললেই চলে। এমনকি তিনি নাকি মন্ত্রী হিসাবেও তাঁর কার্যালয়ে আসছেন না বলেই গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এর মাঝেই সামনে এল মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য কোনও ডাক পাননি পরেশ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নটা জাঁকিয়ে বসেছে, আর কতদিন তৃণমূলে থাকছেন পরেশ? বা আর কতদিনই বা তিনি থাকতে পারবেন জোড়াফুলে?
ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা তৃণমূলে এখন কোনঠাসা অবস্থাতেই দিন কাটবে পরেশের। তৃণমূল খুব দ্রুত পরেশকে বিসর্জন দেবে না, আবার খুব কাছেও টেনে আনবে না। তৃণমূলের তরফে কার্যত সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরেশকন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি নিয়ে যা কিছু ঘটেছে সেখানে তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। তাই সেই দুর্নীতির দায়ভারও তৃণমূলের নয়। স্বাভাবিক ভাবেই পরেশকে নিয়ে এখন মাথা ঘামাতে রাজিও নয় তৃণমূল। তাই মন্ত্রিসভা হোক কী দলীয় কর্মীসভা কোনও কিছুতেই আর অপরিহার্য নন পরেশ। কেন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় পরেশ ডাক পাননি, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হতে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি যতদূর জানি পরেশবাবু এখন মেখলিগঞ্জে(Mekhliganj) আছেন। সেটি কোচবিহার জেলায়। মুখ্যমন্ত্রীর কর্মীসভা হচ্ছে আলিপুরদুয়ার জেলায়। সেখানে কোচবিহার জেলার কাউকেই ডাকা হয়নি।’ যদিও তৃণমূল সূত্রের খবর মঙ্গলবারে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মীসভায় কোচবিহার জেলার শতাধিক নেতা যোগ দেবেন। আসবেন হাজারের বেশি কর্মী। আসবেন না শুধু শ্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী।