নিজস্ব প্রতিনিধি: জলপাইগুড়ির মালবাজারে দলীয় নির্বাচনী সভা সেরে ফেরার পথে আকাশপথে ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee)। জলপাইগুড়ির ক্রান্তি থেকে বাগডোগরার(Bagdogra) উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাঝপথে আকাশ কালো করে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। পাইলট(Pilot) সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারের(Helicopter) মুখ ঘুরিয়ে যে দিকে আকাশ পরিষ্কার, সে দিকে উড়তে শুরু করেন। তলায় বৈকণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল থাকায় তিনি তখনই কপ্টার নামাতে পারেননি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেবকের এয়ারবেসটি দেখতে পান পাইলট। সেখানেই জরুরি অবতরণ করেন। এখন জানা যাচ্ছে, আবহাওয়া দফতর(Weather Department) আগেই জানিয়েছিল, উড়ানপথে আবহাওয়া খারাপ থাকতে পারে। কিন্তু পাইলট জানান, তিনি বাগডোগরা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন ‘কেন্দ্রের ডবল ইঞ্জিন ফুটো হয়ে গেছে’, আক্রমণ মমতার
কিন্তু কেন এমন ঝুঁকি নিয়েছলেন হেলিকপ্টারের পাইলট? সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্রান্তি থেকে বাগডোগরা কপ্টারে যেতে সময় লাগার কথা ছিল ১৩ মিনিট। ঠিক ছিল, হেলিকপ্টারে বাগডোগরা পৌঁছে সেখান থেকে বিমানে কলকাতা ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাইলট সম্ভবত ১৩ মিনিটের পথে দুর্যোগ আছড়ে পড়বে এটা ভাবতে পারেননি। যদিও এক্ষেত্রে তাঁর আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল। কেননা তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ক্রান্তি ছাড়েন তখনই আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। তারপরেও তিনি উড়ান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর তাতেই বাঁধে বিপত্তি। ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রবল দুর্যোগের মুখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিন দিকের আকাশ কালো করে আসে। সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। দুর্যোগের জেরে ভয়ংকর ভাবে কাঁপতে থাকে হেলিকপ্টার। অল্প খানিকক্ষণের দূরত্ব অতিক্রম করতে গিয়েও ঝড়বৃষ্টির কারণে আচমকা জোরে জোরে নড়তে শুরু করে হেলিকপ্টারটি।
আরও পড়ুন চা বাগানের শ্রমিকদের পাট্টা প্রদান থেকে জেলার উন্নয়ন, বার্তা মমতার
নীচে তখন বৈকুণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল। ফলে অবতরণ করার উপায়ও ছিল না। পাইলট বোঝেন, আর এগোন ঠিক হবে না। তখন আকাশের যে দিকে পরিষ্কার ছিল, অর্থাৎ, গতিপথ দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল, সেদিকেই কপ্টারের মুখ ঘোরান পাইলট। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না, কোথায় অবতরণ করবেন। বাগডোগরার দিকে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। অগত্যা তিনি উড়তে থাকেন শিলিগুড়ির দিকে। শেষপর্যন্ত শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে শালুগাড়ার কাছে সেবক এয়ারবেসে জরুরি অবতরণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। বস্তুত, ওখানে যে কোনও এয়ারবেস রয়েছে, তা কারওরই সে ভাবে জানা ছিল না। অনেকটা কপালজোরেই এয়ারবেসটি চোখে পড়ে পাইলটের। সেখানে জরুরি অবতরণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী-সহ কপ্টারের অন্য যাত্রীদের ওই এয়ারবেসের কর্তারা নিরাপদে কাছের সেনা কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁদের রাখা হয়।
আরও পড়ুন মোদি চিরকাল থাকবেন না, নিরপেক্ষ হোন, BSF-কে কড়া বার্তা মমতার
প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়, সকলেই নিরাপদে রয়েছেন। কারও কোনও ধরনের চোট-আঘাত লাগেনি। তবে বড় ধরনের বিপর্যয় যে ঘটতে পারত, তা নিয়ে আধিকারিকেরা নিঃসন্দেহ। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শালুগাড়ার সেনা কার্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় গাড়ি পাঠানো হয়। সেই গাড়িতেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা বাগডোগরা বিমানবন্দরে রওনা দেন। সেখান থেকে বিমানে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। সাধারণত কোনও এয়ার বেসে জরুরি অবতরণের সময় কর্তৃপক্ষের থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয়, যে আর অনুমতি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করেননি পাইলট। আচমকা হেলিকপ্টারের অবতরণের সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে ঝাঁকুনির জেরে হেলিকপ্টার থেকে নামতেও গিয়ে পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পায়ে ও কোমরে চোট লেগেছে বলেই জানা গিয়েছে।