নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূলের তবু একটা ২১শে জুলাই আছে। কিন্তু বিজেপির সেই অর্থে কিছুই নেই। তাই গেরুয়া শিবিরের একমাত্র সম্বল বছর বছর একটা করে নবান্ন অভিযান(Nabanna Abhijan)। রাজ্যের সব নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়া পদ্মশিবিরের কাছে এটাই এখন বার্ষিক কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাও যদি না থাকে তাহলে দলের ক্ষমতা প্রদর্শনের রাস্তাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। অগত্যা সাম্প্রতিক কালের একটা টাটকা হট ইস্যু নিয়ে নবান্ন অভিযানে নেমে পড়ো। যা পাবলিক গোগ্রাসে গিলবে, চ্যানেলে চ্যানেলে ফুটেজ দেখাবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হবে, এমন একটা নাটক করে দেখাও। তাই হাওড়ায়(Howrah) আজ মহানাটক, বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’। আর সেটাও এমন একটা দিনে হচ্ছে যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী শহরের বাইরে। মন্ত্রীরাও কেউ নবান্নমুখী হবেন কিনা সন্দেহ। তারওপর বৃষ্টি। তবুও সেই অভিযান ঘিরে কার্যত যুদ্ধের প্রস্তুতি রাজ্য প্রশাসনে। আর সেই কড়াকড়িতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে হাওড়ার গতি। কলকাতামুখী আমজনতা চূড়ান্ত হয়রানির মুখে। কেননা বন্ধ হয়েছে বাস চলাচল। বন্ধ হয়েছে রাস্তা।
বিজেপির(BJP) নবান্ন অভিযান ঠেকাতে বিশাল বাহিনী তৈরি পুলিশ(Police)। মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাওড়া শহরের বিভিন্ন প্রান্ত কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু(Vidyasagar Setu) এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতু বন্ধ থাকবে। ভোর ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরে মালবাহী গাড়ি ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত এনসি স্ট্রিট এবং কলেজ স্ট্রিটে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিকল্প পথ হিসাবে লেনিন সরণি, মৌলালি হয়ে এজেসি বোস রোড ধরে এগোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে। দুপুর ১২টা থেকে বিজেপির কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্ট্র্যান্ড রোড এবং উত্তর অভিমুখে কিংসওয়ে মোড় পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ১২টার পরে হাওড়ার দিকে ফোরশোর রোড, আন্দুল রোড বন্ধ থাকবে সাধারণের যাতায়াতের জন্য। মিছিল শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে আসা হাওড়া এবং কলকাতামুখী সব গাড়ি হাওড়া-আমতা রোড ও নিবেদিতা সেতু বা বালি ব্রিজের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।
বিজেপির এদিনের কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তবে পুলিশি অনুমোদমের তোয়াক্কা না করেই নবান্ন অভিযানে নামতে চলেছে পদ্মশিবির। তাই পুলিশের তরফেও সেই অভিযান ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নবান্নের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নজরদারিতে রয়েছেন বিশেষ কমিশনার দময়ন্তী সেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তার তদারকিতে রয়েছেন দু’জন করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকছেন ১৮ জন ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক। এ ছাড়াও ৩২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, ৬২ জন ইনস্পেক্টর থাকছেন। শহরের নানা প্রান্ত থেকে নবান্নমুখী বিজেপির মিছিল ঠেকাতে ৫টি জলকামান রাখা হচ্ছে। থাকছে দু’টি বজ্র। এ ছাড়াও গোটা পরিস্থিতি ড্রোনে নজরদারি চালানো হবে। নবান্নের আশপাশে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কার্যত দুর্গে পরিণত করেছে পুলিশ। প্রায় ৩০টি ছোট-বড় ব্যারিকেড করে ঘিরে ফেলা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের প্রধান কার্যালয়কে। কলকাতা এবং হাওড়া সিটি পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী। হাওড়া সেতু, হাওড়া ময়দান চত্বর এবং সাঁতরাগাছি স্টেশন সংলগ্ন কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে তৈরি করা হয়েছে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড।
হাওড়ার দু’জায়গায় দায়িত্বে থাকবেন ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশকর্তারা। সামগ্রিক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার জন্য ছ’টি ড্রোন ব্যবহার করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত এবং হাওড়া মিলিয়ে মোতায়েন থাকবে প্রায় চার হাজার পুলিশ। বিজেপির তিনটি মূল মিছিল ছাড়াও ছোট ছোট মিছিল যাতে বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে নবান্নের দিকে যেতে না পারে, সে জন্য ওই সেতুর বিভিন্ন র্যাম্প-সহ ১৯টি জায়গায় কলকাতা পুলিশের তরফে ব্যারিকেড করা হচ্ছে। সকাল ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত এনসি স্ট্রিট এবং কলেজ স্ট্রিটে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিকল্প পথ হিসাবে লেনিন সরণি, মৌলালি হয়ে এজেসি বোস রোড ধরে এগোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে। দুপুর ১২টা থেকে বিজেপির কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্ট্র্যান্ড রোড এবং উত্তর অভিমুখে কিংসওয়ে মোড় পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিকল্প পথ হিসাবে কিংসওয়ে, আরআর অ্যাভিনিউ, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে গন্তব্যে পৌঁছনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অথবা কিংসওয়ে-আর আর অ্যাভিনিউ-দক্ষিণ অভিমুখে রেড রোড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিজেপির কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিকল্প পথ হিসাবে এজেসি বোস রোড-এক্সাইড মোড়-এজেসি বোস রোড হয়ে উত্তর অভিমুখে এপিসি রোড ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অথবা এজেসি বোস রোড- জহরলাল নেহরু রোড-উত্তর অভিমুখে জহরলাল নেহরু রোড ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।