নিজস্ব প্রতিনিধি: অবশেষে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ গবেষকের দাবি মেনেই নিলেন দেশের সরকারি আবহাওয়াবিদরা। তবে পুরোপুরি নয়, আংশিক দাবিকে মানলেন তাঁরা। সম্প্রতি কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দাবি করেছিলেন চলতি মাসেই আন্দামান সাগরে একটি ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হবে যা ক্রমে নিম্নচাপ ও তারপরে সুপার সাইক্লোনে(Super Cyclone) পরিণত হবে। ভূমি স্পর্শকালে তার গতিবেগ হবে ঘন্টায় ২৫০কিমি। কিন্তু সেই দাবিকে মান্যতা দেননি এদেশের সরকারি আবহাওয়া সংস্থার আবহাওয়াবিদরা। তাঁদের দাবি ছিল ওই গবেষকের দাবি ভুল। ভারতীয় উপমহাদেশের ত্রিসীমানার মধ্যে এই মুহুর্তে কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরির কোনও সম্ভাবনাই নেই। আবহাওয়া ও সমুদ্রের জলের উষ্ণতা নাকি ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূলই নয়। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে নিজেদের সেই দাবি থেকে এবার একটু একটু করে সরতে শুরু করে দিয়েছেন দেশের সরকারি আবহাওয়া সংস্থার আবহাওয়াবিদরা। এখন তাঁরা মানছেন বঙ্গোপসাগরে জন্ম হতে চলেছে আরও একটি ঘূর্ণিঝড়ের। যার নাম হতে চলেছে ‘সিত্রাং’(Sitrang)।
মঙ্গলবার উত্তর আন্দামান সাগরে একটি ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হয়েছে। গুটি গুটি পায়ে এবার সে এগিয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। আগামিকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। দক্ষিণ-পূর্ব ও সংলগ্ন পূর্ব- মধ্য বঙ্গোপসাগরের ওপর দাঁড়িয়ে থেকেই সে তারপর থেকে ক্রমশ নিজের শক্তি বাড়িয়ে যাবে। শুক্রবার থেকেই সে পাড়ি জমাবে স্থলভূমির উদ্দেশ্যে। ২৩ অক্টোবর অর্থাৎ রবিবার এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে ও দ্রুত গতিতে সে মূল ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে আসবে। ২৪ তারিখ অর্থাৎ কালিপুজোর দিন রাতে বা পরের দিন ভোরের দিকে সে ভূমি স্পর্শ করবে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ হবে উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ – দক্ষিণ ওড়িশা। কিন্তু বাঁক নিয়ে তা বাংলা(Bengal)-ওড়িশার(Odisha) দিকেও চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ওড়িশার বালেশ্বর থেকে বাংলার দিঘার মধ্যে তার ল্যান্ডফল হতে পারে। অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলেই কার্যত আছড়ে পড়তে চলেছে এই ঘূর্ণিঝড়। আর এখানেই লুকিয়ে বাংলার বিপদ।
দিল্লির মৌসম ভবনের(Mausam Bhawan) দাবি, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ তৈরি হওয়ার পর সেটির অভিমুখ কোনদিকে হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ঘূর্ণিঝড়টির তীব্রতা কতটা হবে সেটাও এখনই বলা সম্ভব নয়। ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হতে তার দিকে নজর রাখা হবে ও তখনই তার গতিপ্রকৃতি ও অভিমুখ বলা সম্ভব হবে। বঙ্গোপসাগরে যে জায়গায় ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হতে চলেছে তাতে অভিমুখ বিশেষ পরিবর্তন না-হলে এটি উত্তর অন্ধ্র বা দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় প্রায়ই অভিমুখ পরিবর্তন করে। এই ঘূর্ণিঝড়েরও অভিমুখ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। হয় সে বাঁক নিয়ে দক্ষিণ অন্ধ্র প্রদেশ – তামিলনাড়ুর দিকে চলে যাবে না হলে বাংলা-ওড়িশার দিকে ধেয়ে আসবে। আবার বাঁক নেওয়ার জেরে সে সমুদ্রের মধ্যে শক্তি হারিয়ে বিলীন হয়ে যেতেও পারে। করে। ঘূর্ণিঝড়ের ওপর স্থলভাগের বায়ুপ্রবাহের গতিপথ, বায়ুচাপের তারতম্য বেশ প্রভাব ফেলে। উপকূলে উচ্চচাপ বলয় তৈরি হলে তা ঘূর্ণিঝড়কে ভিন্ন পথে ঠেলে দেয়। তাই আপাতত ওই ঘূর্ণিঝড়ের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
মৌসম ভবনের এই দাবির মাঝেই অবশ্য জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর তামিলনাড়ু, পুডুচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক, কেরল, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি ও তা আছড়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। মৌসম ভবন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত তামিলনাড়ু, কারিকল, পুডুচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বাংলা ও ওড়িশায় ২১ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত উপকূল এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও বাংলার মৎস্যজীবীদের ২১ তারিখ বিকালের মধ্যে স্থলভাগে ফিরে আসতে বলা হয়েছে এবং ওইদিন থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বলা হয়েছে দেশের ৪ উপকূলবর্তী রাজ্যকে। পর্যটকদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে যাতে প্রয়োজন হলে দ্রুত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায় সেই দিকেও লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। তৈরি রাখতে বলা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। পূর্ব রেল, দক্ষিণ-পূর্ব রেল, দক্ষিণ-পূর্ব মধ্য রেল, দক্ষিণ রেল কর্তৃপক্ষকেও এই ঝড়ের বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যাতে প্রয়োজন হলেই ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়।