নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিকের(Nishith Pramanik) কনভয়ে হামলার ঘটনায় সিবিআই(CBI) তদন্তের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)। আর এই রায় একদিকে যেমন রাজ্য সরকারের বড় জয় হিসাবে উঠে এল তেমনি বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) কাছে বড় ধাক্কা হিসাবে ধেয়ে এল। এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে কলকাতা হাইকোর্টের একাংশ এমন কিছু রায় দিচ্ছে যা রাজ্যকে খাটোকে করার জন্য দেওয়া হচ্ছে। এবার ভেবে দেখার সময় হয়েছে সব তদন্ত কেন রাজ্য পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। আশাকরি এই রায় সেই একাংশের ঘুম ভাঙাতে সাহায্য করবে।’
আরও পড়ুন স্বাস্থ্যসাথীর কামাল, ১৩৩১ কোটি টাকার চিকিৎসা পেয়েছেন বাংলার প্রবীণরা
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারের দিনহাটায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। বিজেপির অভিযোগ, বোমা, গুলি এবং পাথর ছুঁড়ে হামলা চালানো হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ওই দিন দিনহাটায় গিয়েছিলেন নিশীথ। সেখানেই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। বুড়িরহাট এলাকায় তাঁর কনভয় পৌঁছলে তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে কালো পতাকা দেখান। যার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপি অভিযোগ করে, নিশীথের কনভয়ে হামলা আসলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহের চক্রান্ত। অন্য দিকে, পুরো ঘটনার দায় নিশীথের ঘাড়েই চাপিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন। দিনহাটার তৃণমূল বিধায়কের দাবি, সমাজবিরোধীদের দিয়ে নিশীথ এলাকা দখল করতে চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন মানুষের দাবি মেনে কেলেঘাইয়ের ওপর নয়া সেতু গড়বে মমতার সরকার
এর পরেই বঙ্গ বিজেপি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ঘটনা নিয়ে সরব হন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। হামলার ঘটনাকে ‘শোচনীয়’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এর পরেই কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল বিজেপি। তাদের তরফে আইনজীবী সূর্যনীল দাস প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিচারপতি শ্রীবাস্তবের বেঞ্চ সেই মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছিলেন। সেই মামলাতেই গত মার্চ মাসে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে CBI তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন হাইকোর্টের রায়ের পরেও বাস ভাড়ায় নেই সুরাহা
এদিন সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার রায় দিয়ে জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য আরও ভাল করে খতিয়ে দেখুক কলকাতা হাইকোর্ট। এখনই এই মামলায় CBI তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই। তাই শীর্ষ আদালত এই মামলাকে বন্ধ না করে তা ফের কলকাতা হাইকোর্তেই ফেরত পাঠাচ্ছে ও প্রদেয় রায় পুনরায় বিবেচনা করতে হবে কলকাতা হাইকোর্টকে। আপাতত এই ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাবে রাজ্য পুলিশই। পুলিশের নথি খতিয়ে দেখে তদন্তের ভবিষ্যৎ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সন্দেহ নেই দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে এক বড়সড় জয়। কথায় কথায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দাবি, কথায় কথা রাজ্য পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার ও ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার দাবি, কথায় কথায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে তদন্ত তুলে দেওয়ার প্রবণতা এই সব ক্ষেত্রেই এদিনের রায় একটা বড়সড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।