নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। পাশাপাশি দুটি রাজ্যের রাজ্যপাল হিসাবেও দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু এখন সক্রিয় রাজনীতির আবর্তে তাঁকে দেখা না গেলেও তিনি যে মনেপ্রাণে এখনও রাজনীতিবিদ আছেন, রাজ্যের ও দলের হালহকিকত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন তা তাঁরা টুইটে(Tweet) তিনি নিত্যদিনই প্রমাণ করেন। আর সব থেকে বড় কথা তাঁর টুইটে তিনি বিরোধী তৃণমূল(TMC) বা বাম কিংবা কংগ্রেসকে যত না আক্রমণ শানেন তার থেকে বেশি আক্রমণ করেন নিজের দল বিজেপিকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। তাঁর করা টুইটে এখন ভারত শাসন করা বিজেপিরই মুখ পুড়ছে। আর গেরুয়া শিবিরের প্রতি এই টুইট আক্রমণ দেখে হাসছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি তথাগত রায়(Tathagata Roy)।
রাজ্যের একাধিক মামলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি(ED) ও সিবিআইয়ের(CBI) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী। পাশাপাশি চিটফান্ডকান্ডে সিবিআই ও ইডি নতুন করে গত কয়েকদিন ধরেই তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। চলছে গ্রেফতারিও। এই সময়েই তথাগতবাবু টুইট করে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন তাঁর দল বিজেপিকেই। ঠিক কী লিখেছেন তথাগতবাবু? বঙ্গ বিজেপির এই প্রাক্তন সভাপতি তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘ইডি ও সিবিআই চুরি ধরবে, তৃণমূলের মুখ চুন হবে ঠিকই। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসবে পারবে তখনই, যখন, তাঁরা একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে একটি ভবিষ্যতের চেহারা দেখাতে পারবে। সেই সঙ্গে সংগঠনের দিশেহারা অবস্থাও কাটিয়ে উঠতে হবে। নচেৎ এই রাজ্যের কপালে আছে চরম অরাজকতা।’ আর এই টুইটের জেরেই এখন তীব্র অস্বস্তি ছড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরে। কেননা, এই টুইটে তথাগতবাবু কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন, এতদিন ধরে সিবিআই ও ইডি নিয়ে তৃণমূল যা অভিযোগ করে আসছিল তা সঠিক। দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কার্যত অপব্যবহার করে চলেছে মোদি সরকার। বিরোধীদের দমনপীড়ন করতেই এই দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তথাগতবাবু কার্যত তাঁর টুইটে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার বুকে তখনই নতুন করে আবারও পরিবর্তন হবে যখন বিকল্প কোনও রাজনৈতিক দল আরও ভাল বিকল্প উন্নয়নের মডেল তুলে ধরতে পারবে, যা এখনও এই রাজ্যে করে দেখাতে পারেনি বিজেপি। কেবল ইডি-সিবিআইয়ের তৎপরতা দেখেই তাঁরা লম্ফঝম্ফ করছে। তাঁদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ইডি ও সিবিআই তাঁদের শায়ক শক্তি হয়ে মাঠে নেমেছে তৃণমূলকে ঘায়েল করতে। আর তাতেই বিজেপি হাতে বাংলার মসনদ চলে আসবে। কিন্তু এইরকম ভাবা যে বড় ভুল সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বিজেপির এই বর্ষীয়াণ নেতা। বিজেপি মহারাষ্ট্রে যে ভাবে অস্থিরতা তৈরি করে ক্ষমতা দখল করেছে, বাংলাতেও হয়তো তেমনই ঘটবে বলে অনেকেই আশা করছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না উদ্ধব ঠাকরে ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নয়। সিবিআই-ইডি কাণ্ডে তৃণমূল যতই অস্বস্তিতে পড়ুক ভোটের সহজ অঙ্কে এখনও এগিয়েই রয়েছে তৃণমূল। আগামী দিনে যে সব নির্বাচন বাংলার বুকে হতে চলেছে সেখানেই এই এগিয়ে থাকার ছবি ফুটে উঠতে চলেছে।
এই প্রসঙ্গে এদিন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য(Chandrima Bhattacharya) জানিয়েছেন, ‘এটা ভাল যে সবাই বুঝতে পারছেন যে সিবিআই ও ইডিকে ভুল ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এতে লাভ বিশেষ হবে না। কেননা মানুষ বোকা নন। দেশের সব বিরোধী খারাপ আর বিজেপি ধোয়া তুলসিপাতা এটা দেশের কেউই ভাবে না, বাংলার মানুষও নন। একুশে বাংলার বুকে বিজেপি মক্ষোম উত্তর পেয়েছে, আগামী দিনেও বাংলার মানুষ বিজেপিকে উচিত শিক্ষাই দেবে।’