নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার লোকশিল্প(Folk Arts of Bengal) এবং লোকশিল্পীরা(Folk Artists) যাতে হারিয়ে না যান, চরম দারিদ্রতার মুখে পড়ে যাতে পেশা থেকে সরে না যান, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) উদ্যোগে চালু হয়েছে রাজ্য সরকারের নিজস্ব প্রকল্প ‘লোকপ্রসার’(Lokprasar Project)। এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের প্রায় ১.৯৪ লক্ষ লোকশিল্পীকে আনা হয়েছে। এরা প্রত্যেকে এখন প্রতি মাসে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে পান। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের তরফে এই সব শিল্পীদের নানা জায়গায় অনুষ্ঠান পেতেও সহযোগিতা করা হয়। সেই সব অনুষ্ঠানের জন্যও রাজ্য সরকারের তরফে প্রত্যেক শিল্পীকে ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এবছর দুর্গাপুজোর(Durga Puja) সমন্বয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে অনুরোধ করেছেন, এই লোকশিল্পীদের বেশি করে কাজে নেওয়ার জন্য। আর তার জেরেই দেখা যাচ্ছে এবছর বৃহত্তর কলকাতা(Greater Kolkata) ও শহরতলি এলাকায় গ্রামবাংলার লোকশিল্পীরাও এখন বেশ প্রাধান্য পাচ্ছেন নানা পুজো মণ্ডপে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকপ্রসার প্রকল্পের অন্তর্গত শিল্পীদের চাহিদা গতবারের তুলনায় এবছর অনেকটাই বেশি। আবার তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছৌ নাচ ও বাউলের। এছাড়াও নানা মণ্ডপ থেকে ডাক পাচ্ছেন আদিবাসী নৃত্য শিল্পীরা, গম্ভীরা পালাকাররা, পুতুলনাটকের দল, কালিকাপাতারি্র দল, ভাটিয়ালি গানের শিল্পীরা, ঘোড়ানাচ শিল্পীরা, রায়বেঁশে নৃত্য শিল্পীরা, সাঁওতালি নৃত্য শিল্পিরা এবং ঝুমুর গানের দলের শিল্পিরা। কলকাতার বড় বড় থিম পুজোর জায়গায় না হলেও শহরতলির কমবেশি পুজোমণ্ডপে বা পাড়ায় পাড়ায় পুজোর সময় বা পরে বসে জলসার আসর। সারারাত ধরে চলে গান-বাজনা। পুজোর থিমের মতোই জলসার চরিত্রেও বেশ কিছুটা বদল এসেছে। শহুরে ব্যান্ড, গায়ক-গায়িকাদের পাশাপাশি কলকাতা এবং তার আশপাশের পুজোমণ্ডপের জলসায় এখন ডাক পাচ্ছেন বাংলার লোকশিল্পীরা। সেই সব অনুষ্ঠানের বরাত পেয়েই পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমান থেকে কয়েক হাজার লোকশিল্পীর দল ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে পৌঁছেছে।
জানা গিয়েছে, এই সব লোকশিল্পীরা পুজোর দিনগুলিতে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী পুজোগুলিতে ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠান করবেন। উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার পাশাপাশি সল্টলেক, রাজারহাট, হাওড়া শহর, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহরতলির একাধিক পুজো প্যান্ডেলে অনুষ্ঠানের ডাক পেয়েছেন তাঁরা। অর্থাৎ, পুরো পুজোটাই কলকাতায় কাটিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন। এর ফলে হাজারে হাজারে লোকশিল্পী কাজ পাচ্ছেন দুর্গাপুজোর সময়। এখনও আবেদন আসছে। তাই মোট কতজন কাজ পেলেন, তার পুরো হিসেবটা পুজোর পরেই পাওয়া যাবে। তবে একবাক্যে এটা স্বীকার করতেই হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বাংলার এই লোকশিল্পীরা আজ এই কাজের বরাত পাচ্ছেন বেশি করে। কার্যত বাংলার বিলুপ্ত হতে চলা সব লোকশিল্পকলা ও শিল্পীদের নবজীবন প্রদান করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্র সরকার যখন ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ রেখেছে, তখন রাজ্যের উদ্যোগে তাঁদের জন্য এই বিকল্প রুটিরুজির সুযোগ সৃষ্টির ঘটনাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।