নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য বিধানসভার(West Bengal State Assembly) অধিবেশন নিয়ে তুঙ্গে উঠল রাজ্য সরকার(West Bengal State Government) ও রাজ্যপালের(Governor) বিবাদ। আর তার জন্য দায়ী খোদ রাজ্যপালই(C V Anand Bose)। সেই কারণেই কঠোদ অবস্থান নিচ্ছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রাজ্য বিধানসভার অশিবেশন নিয়ে কোনও জবাবদিদির পথে হাঁটবে না তাঁর সরকার। এমনকি এই মর্মে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করবেন না রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়(Sovondev Chattopadhay)। এমনকি সম্ভবত মুখ্যসচিবও(Chief Secretary) রাজভবনের দিকে এখনই পা বাড়াচ্ছেন না। শুধু এইটুকুই নয়, বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় আগামী সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেরও স্থান পরিবর্তনও করে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। প্রথমে ঠিক হয়েছিল রাজ্য বিধানসভা ভবনেই বসবে মন্ত্রিসভার বৈঠক। কিন্তু এখন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বৈঠক হবে নবান্নের সভাঘরে। ইঙ্গিত স্পষ্ট। রাজ্যপালের কাছে আত্মসমর্পণ নয়।
আরও পড়ুন বাড়তি ধানের পরে এবার বাড়তি দাম, উদ্যোগী মমতার সরকার
আগামী সোমবার অর্থাৎ ২৪ জুলাই থেকে রাজ্য বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু করতে চেয়ে রাজভবনে ফাইল পাঠিয়েছিল রাজ্যের পরিষদীয় দফতর। সেই ফাইলে রাজ্যপাল অনুমোদন দিলেই সোমবার থেকে শুরু হতে পারত বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন। সেই মর্মে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল বিধানসভায়। কিন্তু রাজভবন প্রশ্ন তোলে, কেন এত কম সময়ের নোটিসে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হচ্ছে? শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বুধবার রাজভবনে তলবও করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। কিন্তু বুধবার পরিষদীয় মন্ত্রী শহরে ছিলেন না। তিনি তাঁর পরিবর্তে পরিষদীয় দফতরের কোনও আধিকারিককে রাজভবন পাঠানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাজভবন পাল্টা জানিয়ে দেয়, অন্য কোনও আধিকারিক নয়, মন্ত্রী নিজে না আসতে পারলে আসতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। যদিও সূত্রের খবর, বুধবার রাত পর্যন্ত রাজভবনে যাননি মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর মৌখিক অনুমোদন না পেলে তিনি রাজভবনে যাওয়ার কথা ভাবছেন না। যাচ্ছেন না শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও।
আরও পড়ুন অভাব ও মানসিক অবসাদেই আত্মহত্যার চেষ্টা মা-মেয়ের
মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যপালের কোনও ‘শর্ত’ বা ‘প্রশ্নের’ মুখে জবাবদিহি করতে রাজি নন, তা কার্যত এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেননা রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক রাজ্য বিধানসভায় হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়ে গিয়েছিল আগেই। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ২৪ জুলাই, সোমবার বিধানসভা ভবনেই বসবে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। কিন্তু রাজভবন থেকে অধিবেশন শুরুর ফাইলটিতে অনুমোদন না দেওয়ায় বুধবার রাতে মন্ত্রিসভার বৈঠক প্রসঙ্গে আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, ২৪ জুলাই সোমবার বিধানসভার বদলে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে নবান্নের সভাঘরে। আর রাজ্যপালের কারণেই একই সঙ্গে এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে রাজ্য বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন নিয়ে। পরিষদীয় নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যপালের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়া বিধানসভার অধিবেশন শুরু করা যায় না। তবে রাজ্যপালের শর্ত মেনে পরিষদীয় মন্ত্রী বা মুখ্যসচিব তাঁর কাছে ‘জবাবদিহি’ করতে যাবেন না বলেই এখন মোটামুটি ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই রাজভবন-রাজ্য সরকার সংঘাতে বাদল অধিবেশনের ভবিষ্যৎও খানিকটা ঝুলে গেল। অধিবেশন শুরুর জন্য বিধানসভায় যে প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছিল, তা-ও আপাতত থমকে গিয়েছে বলেই বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর।
