নিজস্ব প্রতিনিধি: রাত পোহালেই আগামিকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবস বা International Womens Day। প্রতি বছরই নারী দিবসে কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চগ্রামে প্রচার করে নারীর ক্ষমতায়নে(Women Impowerment) তাদের সাফল্যের ফিরিস্তি। এবারেও করবে। কিন্তু সেই দিনটির প্রাক্কালে পরিসংখ্যান বলছে, নারী দিবসের প্রতিশ্রুতিই সার। কথা রাখেনি মোদি সরকার(Modi Government)। আধা সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা— সর্বত্রই মহিলার কর্মীর নামমাত্র সংখ্যা বুঝিয়ে দেয় ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ আদতে কথার কথা। ঠিক তার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি তাঁর দেওয়া কথা রাখেন। দেশের মহিলারা পিছিয়ে থাকলেও বাংলার বুকে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ আজ চূড়ান্ত ভাবে সফল হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন মমতার বাংলায় কৃষিজাত পণ্যের ওপর নয় কোনও Income Tax
২০১৪ সালে দেশের ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার নারী দিবসে যে সব ঘোষণা করে এসেছে এখনও পর্যন্ত তার অধিকাংশই পূরণ হয়নি। সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতিও অপূরণ থেকে গিয়েছে। এই অপূরণের তালিকায় সবথেকে বড় ব্যর্থতা চোখে পড়ে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীতে মহিলা জওয়ান ও অফিসারের সংখ্যা দেখে। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল, আধা সামরিক বাহিনীগুলিতে ৩৩ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হবে নারীদের জন্য। অথচ সেই ঘোষণার ৬ বছর পর ২০২১ সালের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। গড়ে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ মহিলা জওয়ান রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীতে। সর্বোচ্চ Central Industrial Security Force বা CISF-এ, মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন Assam Rifles ও Indo Tibbetian Border Force-এ, মাত্র আড়াই শতাংশ। BSF-এ মাত্র ৩ শতাংশ। নারী কর্মপ্রার্থীদের জন্য একঝাঁক সুবিধা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। আবেদনপত্র জমা দেওয়া যায় বিনামূল্যে। পুরুষের তুলনায় শারীরিক পরীক্ষায় ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে বারংবার যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে, তার ধারেকাছে পৌঁছনো যায়নি। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছে উষ্মা প্রকাশও করে। কমিটির দাবি ছিল, আরও দ্রুত মহিলা জওয়ান নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
আরও পড়ুন 600 Degree তাপমাত্রা সহনশীল Steel তৈরি করল IISCO Burpur
শুধু নিরাপত্তা বাহিনীই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতেও নামমাত্র মহিলা কর্মী ও অফিসার। শেষ প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী মোট কর্মীসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ মহিলা। যা সত্যিই উদ্বেগের। ২০২০ সালে ছিল সাড়ে ১০ শতাংশ। তারপর আরও কমে গিয়েছে। শুধু মহিলা কর্মী ও জওয়ান নন, খোদ ভারত সরকারের মন্ত্রিসভাতেই মহিলা পূর্ণমন্ত্রীর সংখ্যা নগণ্য। মাত্র ২ জন। নির্মলা সীতারামন ও স্মৃতি ইরানি। ২০২১ সালের রদবদলের পর মোট ১১ জন মহিলা মোদি সরকারে মন্ত্রী হন। কিন্তু দু’জন ছাড়া বাকিরা রাষ্ট্রমন্ত্রী। বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে নেই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। শেষ ছিলেন গুজরাতের আনন্দীবেন প্যাটেল। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি অপসারিত হন। সেই কারণেই এবার ত্রিপুরায় প্রতিমা ভৌমিককে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে কি না, তা নিয়ে বেশ জল্পনা ছিল। কিন্তু সেই জল্পনাও বাস্তবের মুখ দেখল না।
আরও পড়ুন অভিষেকের ডায়মন্ডে ২৭ কোটির প্রতারণা, গ্রেফতার মা-পোলা
এর বিপরীতে একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাংলার অগ্নিকন্যা, বাংলার বাঘিনী, বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা যা তিনি কথা দিয়েছিলেন তার সবই তিনি পূর্ণ করেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, Students Credit Card, সবুজশ্রী, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, জয় বাংলা, জয় জোহর যেমন বাংলার মহিলাদের আর্থিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে তেমনি রাজনৈতিক ভাবে মহিলাদের আরও বেশি সংখ্যায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে, পুরসভা নির্বাচনে, বিধানসভা নির্বাচনে, লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করার জন্য এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মানুষের ভোটে জয়ী হয়ে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ বাহিনীতেও মহিলাদের সংখ্যা ও পদন্নোতি ক্রমশ বাড়ানো হচ্ছে। Winners Team, Woman Police Station, মহিলাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী বাংলাকে এগিয়ে চলেছে দেশের অনান্য রাজ্যগুলির থেকে। এই জন্যই দেশের মধ্যে নানা সরকারি প্রকল্পে, উন্নয়নের খতিয়ানে, বাংলা বার বার বাজিমাত করছে। পুরস্কার জিতে নিচ্ছে, শুধু কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকেই নয়, আন্তর্জাতিক মহল থেকেও। মোদি পারেননি, মমতা পেরেছেন, বাংলার মেয়েদের এগিয়ে দিতে।