এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

শীতের ভ্রমণ: খোশবাগ, মুর্শিদাবাদের এক বেদনামুখর গাথাকাব্য (পর্ব-তিন)

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রথম দুটি পর্বে আমি আপনাদের মুর্শিদাবাদ শহর ও সংলগ্ন এলাকার দ্রষ্টব্যগুলি সম্পর্কে জানিয়েছিলাম। বেশিরভাগ মানুষই এগুলিই দেখে ফিরে আসেন। এক্ষেত্রে একদিনে অর্থাৎ সকাল সকাল মুর্শিদাবাদ পৌঁছে রাতের মধ্যেই কলকাতা ফিরে আসাতে পারবেন। কিন্তু যদি আরও একটি দিন মূুর্শিদাবাদ থাকতে পারেন, তবে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করবে আরও এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। মুর্শিদাবাদ ভ্রমণের তিন নম্বর বা শেষ পর্বে সেই গল্পই শোনাবো আপনাদের। আজ শোনাবো খোশবাগের কথা, যা মুর্শিদাবাদের এক বেদনামুখর গাথাকাব্য। আর আছে কিরীটেশ্বরী মন্দির। মুর্শিদাবাদ বা বহরমপুর শহর থেকে ভাগীরথী পার হয়ে যেতে হয় খোশবাগ। সেও এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। সেতু পেরিয়েও যাওয়া যায়, তবে খেয়া পার হয়ে যাওয়া ভালো। ছোট চারচাকা গাড়ি বা টোটো উঠে যায় নৌকাগুলিতে। কয়েক মিনিটেই পার হওয়া যায় ভাগিরথী, কিন্তু তাও এক শিহরিত যাত্রা।

রানীভবানী মন্দির-‘জগদ্বন্ধু ধাম

ভাগীরথী পেরিয়ে প্রথমেই যেতে পারেন রানীভবানীর মন্দির। শোনা যায়, রানীভবানী ছিলেন অনেকটা দক্ষিণেশ্বরের রানী রাসমণির মতো এক মহিয়সী নারী। তিনই এই মন্দির নির্মান করিয়েছিলেন। মুখোমুখি চারটি মন্দির, প্রতিটি মন্দিরের গায়ে পুরাণের বহুঘটনার ছবি খোদিত আছে। যা বাংলার প্রাচীন পোড়ামাটির শিল্প। কিছুটা সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখে নিন। মন ভরে যাবে। এরপর চলে যান ডাহা পাড়া ‘জগদ্বন্ধু ধাম’ দেখতে। এই স্থানটির কোনও ঐতিহাসিক গুরুত্ব না থাকলেও সাদা মার্বেলে বাঁধানো বেশ বড় মন্দির চত্বরটি আপনার মন ভরিয়ে দেবে। শীতে এই মন্দিরের ভিতর বাগানে ফুলের সমারহ মন ভালো করে দেয়। চাইলে এখানে কুপন কেটে দুপুরের খাওয়া সেরে নিতে পারেন। এবার সোজা চলে যান খোশবাগ, যেখানে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার সমাধি রয়েছে।

খোশবাগ-

এখানেই সাদামাটাভাবে চিরশয্যায় শায়িত বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব, সিরাজৌদ্দল্লা। যা দেখে আপনার মন খারাপের শুরু হবে। খোশবাগে একটি গাইড নিয়ে নেবেন, খরচ ওই ৫০ টাকা মতোই। তাঁর মুখেই শুনবেন এক বিশ্বাসঘাতকতার অবাক করা গল্প ও তার করুণ পরিনতি। সে এক লজ্জার ইতিহাস। খোশবাগ হল নবাব আলিবর্দী খাঁর পারিবারিক সমাধিস্থল। তাঁর পরিবারের প্রায় সকলেই চিরঘুমে শায়িত এখানে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে ভারতে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হওয়ার যুগসন্ধিক্ষণ যেন কথা বলে এখানে। কারণ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজৌদ্দল্লার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুশো বছরের জন্য পরাধীন হয়েছিল এই উপমহাদেশ, স্বাধীনতা হারিয়েছিল একটি জাতি। তবে গাইডের মুখে শুনবেন সেই দিনগুলির ইতিহাস, দেখবেন কত সাদামাটা এক সমাধিতে সমাহিত বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। আর সেই ইতিহাস যত শুনবেন ততই মন খারাপের পালা শুরু হবে।

তবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় প্রায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল এই ঐতিহাসিক মহার্ঘ সম্পদ। যদিও এখন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দায়িত্ব নেওয়ার পর অবস্থা বদলেছে। খোশবাগের সমাধিঘর ও স্থাপত্যগুলি দেখার মতো। পাশাপাশি সংলগ্ন বাগান বেশ কেয়ারি করে সাজানো। কোথায় কার সমাধি, তাঁর কি ভূমিকা ছিল। নবান সিজারদৌল্লা কীভাবে ধরা পড়েছিলেন, আর স্বাধীন ও সাহসী বাংলার শেষ নবাবের শেষ পরিনতিই বা কী হয়েছিল সেই গল্পই বলে যাবেন গাইড। আর আপনি তখন হারিয়ে যাবেন সেই পলাশির যুদ্ধের সময়ে।

কিরীটেশ্বরী মন্দির-

বাংলার প্রাচীন কালী মন্দির, মুর্শিবাদের নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু, মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের। একই সঙ্গে পুজোর দেখাশোনা করেন তাঁরা। কথিত আছে, এখানে সতীর কিরীট বা মাথার মুকুট পড়েছিল। ফলে এটি একটি সতীপীঠ। তবে বাংলার ইতিহাস বহু সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দিরের সঙ্গে। এখানকার দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দিরটি ভেঙে পড়ে। তার পরে ১৯ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন করে মন্দির নির্মাণ করান। এখানে দেবী শিলাস্বরূপা, অর্থাৎ তারাপীঠের মতো এক দিব্য শিলাকেই দেবী রূপে পুজো করা হয়। তাঁর কোনও নিয়তাকার মূর্তি নেই। কোনও ছবিও এখানে পূজিত হয় না। তবে শিলাটি একটি আবরণে আচ্ছাদিত। যা প্রতি বছর দুর্গাষ্টমীতে পরিবর্তন করা হয়। এখানে গেলে দেখবেন, পাশেই একটি পুকুরের পাশে দেবীর প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষটি। এছাড়াও আরও কয়েকটি প্রাচীন শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।

কথিত আছে, পলাশীর যুদ্ধের পর যখন মিরজাফর, নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা রাজবল্লভকে ডুবিয়ে মারেন। সেই দিন এই মন্দিরের এক শিবলিঙ্গ নাকি নিজে থেকেই ফেটে গিয়েছিল। আরও বড় কথা হল, বিশ্বাসঘাতক মিরজাফর শেষ বয়সে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত হন। তিনি কোনওভাবে জানতে পারেন দেবীর চরণামৃত পান করলে তিনি রোগমুক্ত হবেন। এরপর সুবে বাংলার শেষ নবাব মিরজাফরের কাছে কিরীটেশ্বরী মন্দির থেকে দেবীর চরণামৃত পৌঁছয়। কিন্তু সেই চরণামৃত পান করেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মিরজাফর।

মুর্শিদাবাদ ভ্রমণের তিনটি পর্ব এখানেই শেষ….

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ঘন ঘন বুক জ্বালা অম্বল ! ভুলেও এই ৫ টি খাবার ছোঁবেন না

গরম থেকে নিস্তার পেতে এই আনাজের ওপরেই রাখুন ভরসা!

ঘুরেও তাকানো বারণ, রাজস্থানের রহস্যময় মন্দিরের কাহিনী শুনলে চমকে উঠবেন

মাত্র ২ টা লেবু দিয়ে দোকানের মত বানিয়ে ফেলুন ‘লেমন আইসক্রিম’

গরমে ভরসা আলু না রাঙা আলু ! জেনে নিন কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ঘরের শোভা বাড়াতে বাড়ির টবেই লাগান অপূর্ব এই গাছগুলি

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর