এই মুহূর্তে




নটরাজের নিচে বামন অসুরটি কে? জেনে নিন অজানা কাহিনী




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় :         জটাটবীগলজ্জলপ্রবাহপাবিতস্থলে

                                       গলেবলংব্য় লংবিতাং ভুজংগতুংগমালিকাম্ ।

                                               ডমড্ডমড্ডমড্ডমন্নিনাদবড্ডমর্বয়ং

                                          চকার চণ্ডতাণ্ডবং তনোতু নঃ শিবঃ শিবম্ ।।

দেবাদিদেব মহাদেবের মহাজাগতিক নর্তক রূপ হল নটরাজ (Nataraja), যে রূপে তাঁকে তাণ্ডব নৃত্য (Cosmic dance) করতে দেখা যায়। শিবের এই রূপ কালের অন্তহীন চক্রের প্রতীক এবং মহাবিশ্বের স্রষ্টা, পালনকারী ও ধ্বংসকারী হিসেবে তাঁর ভূমিকার এক উজ্জ্বল প্রকাশ। পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুসারে, নটরাজের মূর্তিতে শিবের বিভিন্ন দিক, যেমন – ধ্বংস, সৃষ্টি, এবং সময়ের চক্রের প্রতীকী প্রকাশ দেখা যায়। নটরাজ সাধারণত চার হাত বিশিষ্ট।  অগ্নি বলয় পরিবেষ্টিত, পদ্মফুলে দণ্ডয়মান, এবং এক বামন রাক্ষসের উপর পা দিয়ে ভারসাম্য রাখতে দেখা যায়। তাঁর উপরের ডান হাতে ডমরু এবং উপরের বাম হাতে অগ্নি থাকে, যা সৃষ্টির প্রথম ধ্বনি এবং ধ্বংসের শক্তির প্রতীক। তবে, কখনও ভেবে দেখেছেন কী, তাঁর পায়ের নিচে শায়িত অসুরটি কে ? কেনই বা দেবাদিদেব অসুরটিকে পদদলিত করছেন ?

এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, জগৎ সৃষ্টির সময় থেকেই ভালো ও মন্দের সমন্বয়ে গঠিত। তবে সময় বিশেষে  “পরিত্রাণায় সাধুনাম বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম” করতে ভগবানের আবির্ভাব অবশ্যম্ভাবী। নচে‍ৎ জগতের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, যখন মহিষাসুর অতি পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছিলেন, তখন মা দুর্গা তাঁকে পরাস্ত করে ঠাঁই দিয়েছেন নিজেরই পদতলে অর্থাৎ, শুভ শক্তির পদতলে অশুভ শক্তির বিনাশ হয়েছিল। আবার, রাক্ষসরাজ হিরণ্যকশিপুকে বধ করতে আবির্ভুত হয়েছিলেন নৃসিংহ অবতার। ঠিক তেমনই নটরাজ মূর্তিতে মহেশ্বরের দক্ষিণ পদতলে অবস্থিত  বামন অসুরটি আধ্যাত্মিক অজ্ঞতা এবং অর্থহীন কথাবার্তার প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থাৎ তিনি মানব জীবনের বামনত্ব বা ক্ষুদ্রতারই প্রতিনিধি। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই অসুরটির নাম অপস্মরা, যিনি মুয়ালকা বা মুয়ালাকান নামেও পরিচিত।

পৌরাণিক কাহিনি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, পৃথিবীতে জ্ঞান রক্ষা করার জন্য অপস্মরাকে অর্থাৎ অজ্ঞানতা বা জ্ঞানের বামনত্বকে হত্যা নয়, বরং বশীভূত করা বাঞ্ছনীয়। কারণ হত্যা করলে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও অজ্ঞতার মধ্যে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য নষ্ট হবে। আত্মহৃদয়ে অপস্মরাকে হত্যা করার প্রচেষ্টা, উত্সর্গ এবং কঠোর পরিশ্রম ছাড়াই জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টার প্রতীক হবে এবং এটি সমস্ত আকারেই জ্ঞানের অবমূল্যায়নের দিকে পরিচালিত করবে। অর্থাৎ কঠোর সাধনা বা ধ্যান ছাড়া যে সংক্ষিপ্ত উপায়ে জ্ঞানার্জনের প্রচেষ্টা তা প্রকৃতপক্ষে অসম্পূর্ণ জ্ঞান। তাই অপস্মরাকে বশীভূত করার জন্যই পরম যোগী, পরম জ্ঞানী পরমেশ্বর দেবাদিদেব — নৃত্যের প্রভু নটরাজের রূপে মহাপ্রলয় তথা তাণ্ডবের মহাজাগতিক নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন এবং এই নৃত্যের সময় তিনি অপস্মরাকে তাঁর ডান পা দিয়ে পিষে দমন করেছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে সকল মানুষের মধ্যেই অপস্মরার অজ্ঞতা বিরাজ করে, যা কখনোই সম্পূর্ণ রূপে অন্তর্হিত হয়না। এই ছোট ভয়ঙ্কর রাক্ষস অপস্মরা বা মুয়ালকা একজন বামন ও অজ্ঞতার মূর্ত প্রতীক। অত্যন্ত শক্তিশালী এই রাক্ষস হল লোভী ও অধিকারী সত্ত্বার প্রকাশ। তাই বিশ্বাস করা হয় যে মহেশ্বর চিরকাল তাঁর নটরাজ রূপে অপস্মরাকে অনন্তকাল ধরে পায়ে পিষে দমন করে রাখেন। অর্থাৎ অপস্মরার বা অজ্ঞতার মৃত্যু নেই ও চিরকাল সে মানব হৃদয়ে উপস্থিত, অমর। কিন্তু সে অমর হলেও অপরাজেও নয়। শিবের মতো কঠোর মহাজ্ঞান ও তপস্যার দ্বারা অপস্মরাকে বশীভূত করা সম্ভব কিন্তু তাঁকে হত্যা করা সম্ভব না। অর্থাৎ, এর থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়, একজন ব্যক্তি যতই জ্ঞানী হন না কেন, কিছু না কিছু অজ্ঞতা তাঁর ভেতরে থেকেই যায়। কিন্তু সাধনা ও জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যথাসম্ভব নিজেকে জ্ঞানী করে তোলা যায়। দেবাদিদেবের পদতলে অপস্মরার পিষ্ট হওয়া তারই প্রতীক।

কিন্তু নটরাজ মূর্তিতে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, তিনি নাচের সময় ডান পায়ে অপস্মরাকে দমন করার পাশাপাশি বাম পা’টি মাটি থেকে তুলে রেখেছেন। এক্ষেত্রে মানুষের অজ্ঞ মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, তিনি কী তাহলে তাঁর নৃত্যকলা প্রদর্শনের জন্য বাম পা ওপরে তুলে রেখেছেন? না। একেবারেই না। এর নেপথ্যে মূল কারণটি হল, এই উত্তোলিত পা মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অমান্য করছে। এই নৃত্য ভঙ্গিমায় এই পা-টি মোক্ষলাভ বা মুক্তির প্রতীক।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ভারত ছাড়ার ধুম, কেন্দ্রের দাওয়াইয়ে হাজার হাজার লোক ফিরছেন পাকিস্তানে

বেঁচে ফিরেছিলেন মৃত্যুর মুখ থেকে, ৩ কোটিরও বেশি টাকায় বিক্রি হল টাইটানিক যাত্রীর চিঠি  

দীর্ঘ  দু’দশকের প্রতীক্ষার অবসান, অবশেষে সিবিএসই’র স্বীকৃতি পেল লাদাখের র‍্যাঞ্চো স্কুল

মন্দির ধ্বংসের হুমকি দিয়ে মুসলিম যুবক মাতলেন পহেলগাঁও হামলার আনন্দে, উচিত শিক্ষা দিলেন স্থানীয়রা

সরকারি ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি থেকে উদ্ধার টাকার পাহাড়, বাজেয়াপ্ত BMW, ২৮ একর জমি

পহেলগাঁওকাণ্ডের জের, নিয়মের গেরোয় মাকে ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরতে হল একরত্তি শিশুকে

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর