এই মুহূর্তে




নিজের হাতে এই ভক্তের নৈবেদ্য গ্রহণ করছিলেন মহাপ্রভু




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় : মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ ভক্তের ভগবান। তিনি সমগ্র জগতের নাথ। তিনি উচ্চ নিচ ধনী গরিব নির্বিশেষে সকল ভক্তদের কাছে টেনে করে নিয়েছেন আপন। তিনি যুগ যুগ ধরে তাঁর অসংখ্য নিচু বর্গের ভক্তদের শুধু দেখা দেননি, এমনকী তারা যখনই মনে প্রাণে তাঁকে ডেকেছেন, তিনি ভক্তের ডাক উপেক্ষা করে থাকতে পারেননি।

বালিগ্রামের দাসিয়া বাউড়ি—যিনি সমাজের চোখে নিচু জাতের মানুষ ছিলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে অসচ্ছল, সামাজিক মর্যাদার দিক থেকেও ছিলেন নিঃস্ব। কিন্তু এ সমস্ত বাহ্যিক অবস্থার অনেক ঊর্ধ্বে ছিল তাঁর অপরিসীম ভক্তি। জগন্নাথদেবের প্রতি তাঁর প্রেম ছিল নিখাদ, নিঃস্বার্থ। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দারুব্রহ্মর সরাসরি দর্শন দাসিয়ার ভাগ্যে হয়নি; তথাপি তাঁর অন্তরে প্রভুর প্রতি আস্থা ছিল অটল।

একবার রথযাত্রার সময় বালিগ্রাম থেকে পুরীতে এসেছিলেন দাসিয়া। রথারূঢ় জগন্নাথদেবকে একবার দেখতে পেয়েই তিনি হাতজোড় করে কাতর প্রার্থনা করলেন, “প্রভু, আমি যদি কখনও খাবার সময় আপনাকে স্মরণ করি, তবে অনুগ্রহ করে আপনি দর্শন দেবেন।” সেই করুণ নিবেদন শুনে জগন্নাথদেব যে তাঁর প্রার্থনা গ্রহণ করেছেন, তা শিগগিরই প্রমাণিত হয়েছিল।

রথযাত্রার পর নিজের গ্রামে ফিরে দাসিয়া একদিন হাঁড়িতে ভাত ও শাক সিদ্ধ করতে বসিয়েছিলেন। উনুনে হাঁড়ি বসিয়ে প্রভুর কথা ভাবতে ভাবতে হাঁড়ির দিকে তাকাতেই তাঁর চোখ স্থির হয়ে গেল। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তিনি দেখলেন—সেই হাঁড়ির ভেতরে স্বয়ং জগন্নাথের মুখ। ভক্তের দিকে চেয়ে মধুর হাসি হাসছেন মহাপ্রভু। এই অনন্য অভিজ্ঞতায় দাসিয়া বুঝলেন, ভক্তি সত্যিই সকল বর্ণ, জাত, সামাজিক ভেদাভেদ অতিক্রম করতে সক্ষম।

অতঃপর একদিন দাসিয়া শ্রীমন্দিরের এক ব্রাহ্মণের মাধ্যমে প্রভুর জন্য একটি নারকেল পাঠালেন। সেই ব্রাহ্মণ প্রথমে নিজের পুজো সেরে, পরে জগন্নাথের উদ্দেশে নারকেল নিবেদন করলেন এবং বললেন, “প্রভু, বালিগ্রামের দাসিয়া বাউড়ি এই নারকেল পাঠিয়েছেন।” তখন এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটল—অপাণি জগন্নাথদেব স্বয়ং তাঁর হাত বাড়িয়ে সেই নারকেল গ্রহণ করলেন! প্রভুর এই লীলায় ব্রাহ্মণ স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।

পুজো শেষে সেই ব্রাহ্মণ জনসমক্ষে স্বীকার করলেন, “হতে পারি আমি বর্ণে শ্রেষ্ঠ, কিন্তু দাসিয়া বাউড়ির মতো বিশুদ্ধ ভক্তি আমার নেই। তিনি সত্যিই ভক্তশ্রেষ্ঠ।” এই কাহিনি প্রমাণ করে—ভক্তির কাছে জাতি, বর্ণ, সামাজিক অবস্থানের কোনও গুরুত্ব নেই। প্রকৃত হৃদয়ের প্রেমই ভগবানের চরণে পৌঁছায় এবং সেই ভক্তিই তাঁকে আবিষ্ট করে। দাসিয়া বাউড়ির নিখাদ প্রেম ও বিশ্বাস তাই আজও ভক্তিবাদের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। জয় জগন্নাথ ।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ডাইনি অপবাদে পূর্ণিয়ায় একই পরিবারের ৫ জনকে জ্যান্ত পুড়িয়ে খুন

পরকীয়ায় বাধা! প্রেমিকের সঙ্গে মিলে প্রতিবন্ধী স্বামীকে গলা টিপে খুন করলেন তিন সন্তানের মা

৮৫৪ কোটি টাকা বেতনে Meta-য় যোগ আইআইটি কানপুরের প্রাক্তনী ত্রিপত বনশলের

আইসিইউতে জনপ্রিয় গায়িকা ফরিদা পারভীন, ইউনূস সরকারের সাহায্য নিতে অস্বীকার

দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে মানুষও পূজিত ঈশ্বর রূপে, জেনে নিন অজানা মন্দিরের কাহিনি

জেনে নিন, কী ভাবে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর পরবর্তী জন্মে মুক্তি লাভ হয়েছিল

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ