নিজস্ব প্রতিনিধি, চন্দ্রকোনা: রসায়নে স্নাতক হয়েও মেলেনি সরকারি চাকরি। সরকারি চাকরি পাওয়ার বহু চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা অধরাই থেকে গিয়েছে। তবুও হার মানতে নারাজ ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার বাসিন্দা সাগরিকা। স্বাবলম্বী হওয়ার বাসনা তাঁর চিরকালের। সাগরিকা তাই এখন বাসের কন্ডাক্টর, তবে অন্যের বাস নয়, নিজেরই কেনা বাসের। আর এই কন্ডাক্টারি করেই সংসারের হাল ধরেছেন চন্দ্রকোনার এই গৃহবধূ। তাঁর কথায়, কাজটা মেনে নিতে পারেননি আত্মীয়-পরিজনরা। কিন্তু আজ সাফল্য আসায় তাঁরা এখন প্রত্যেকেই খুশি। আর এই রুটের যাত্রীরাও স্বীকার করেন, কন্ডাক্টর দিদির ব্যবহারই আমাদের মুগ্ধ করে। এ এক অন্য অনুভূতি।
এ এক অন্য জীবনের গল্প। ছোট থেকেই মেধাবী সাগরিকা বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করে রসায়নে স্নাতক হয়েছেন। সরকারি চাকরির চেষ্টা করেও মেলেনি। এরপর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য বাসনায় তিনি পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত হন। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করেই ঋণ নিয়ে কিনে ফেলেন একটি বাস। করোনা অতিমারীর মধ্যেও তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাস ছয়েক আগে। দৌঁড়ঝাঁপ করে চন্দ্রকোনা থেকে কলকাতা স্টেশন পর্যন্ত রুটের ছাড়পত্র আদায় করেন। এরপর শুরু হয় তাঁর ব্যবসা।
নিজেই কন্ডাক্টেরর ব্যাগ কাঁধে তুলে নেন। দূরপাল্লার বাসে এক গৃহবধূ কন্ডাক্টরি করছেন এই দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু যারা চন্দ্রকোণা টাউন কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে কলকাতার মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করেন তাঁরা সাগরিকাকে দেখে অবাকই হন। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই তিনি দূরপাল্লার বাস পরিচালনা করেন। টিকিট সংগ্রহ, যাত্রী ওঠানো-নামানো থেকে শুরু করে যানজটের মধ্যে চালককে পরামর্শ দেওয়া সবটাই করেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়।
সাগরিকার কথায়, প্রথম দিকে আত্মীয়-পরিজন থেকে পরিবারের লোকেরাও মেনে নিতে পারেননি যে বাড়ির বউ বাসের কন্ডাক্টরি করবে। তবে আমি প্রথম থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করেই বাস কিনে ফেলি। কোনও দিকে না তাঁকিয়ে শুরু করি পরিবহণ ব্যবসা। ছয় মাসের মধ্যেই সাফল্য এসেছে। যদিও তাঁর স্বামীও তাঁকে বাস পরিচালনা করতে সাহায্য করেন। তবে সাগরিকার অদম্য জেদ ও আত্মবিশ্বাস চমকে দিয়েছে অনেককেই।
প্রতিদিন ভোর তিনটেয় ঘুম থেকে উঠে সংসারের টুকিটাকি কাজ সেরে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়েন সাগরিকা। ভোর পাঁচটা নাগাদ নিয়ম করে পৌঁছে যান চন্দ্রকোণা টাউন কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে। এরপর বাস নিয়ে সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এভাবেই রোজ দূরপাল্লার বাস পরিচালনা করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন চন্দ্রকোনার বিজ্ঞানে স্নাতক গৃহবধূ। আজ তাঁর স্বামীও গর্বিত স্ত্রীর সাফল্যে। বললেন, আগামীদিনে সাগরিকা অনেকেরই রোল মডেল হয়ে উঠবে।