নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রতিশ্রুতি ছিল নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতিতেই ভর দিয়ে বিজেপিকে(BJP) দুই হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছিলেন মতুয়ারা(Matua)। সেটা ছিল ২০১৯ সাল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির ছিঁটেফোঁটাও রাখেনি পদ্মশিবির। তার প্রভাব পড়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও। মতুয়া ভোটের কিছুটা হলেও ফিরে পায় তৃণমূল(TMC)। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ এবং নদিয়া জেলার রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমা এলাকা বাদ দিয়ে রাজ্যের অন্যত্র সব জায়গাতেই মতুয়া ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে(Panchayat Election) ভোটদানের জন্য মতুয়ারা ফের বুথমুখী হবেন। সেই ভোট কী এবার আর পাবে বিজেপি? এটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে নদিয়া(Nadia) জেলার রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমা এলাকায়। কেননা এই এলাকার মতুয়ারা রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়েছেন ঠাকুরনগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Abhishek Banerjee) বাধা দেওয়ার ঘটনায়। তাঁরা ক্ষুব্ধ বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের(Shantanu Thakur) ভূমিকা ও ব্যবহারে। আর তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের বড় অংশের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা করছেন বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা।
আরও পড়ুন ‘কীসের ভিত্তিতে এত কথা বলছেন রাজ্যপাল?’ প্রশ্ন তৃণমূলের
উল্লেখ্য, গত রবিবার তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচি নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করতেই সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে বিজেপি। অভিষেককে মূল মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। আর তাতেই ক্ষুব্ধ নদিয়ার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। ঠাকুরবাড়ির সদস্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের আচরণ তাঁরা ভালোভাবে নেননি। মন্দিরের অবারিত দ্বারে জনপ্রতিনিধিকে ঢুকতে না দিয়ে তাঁকে অপমান করার জবাব মানুষ ভোটবাক্সে দেবেন বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে মতুয়া মহাসঙ্ঘ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে ঠাকুরবাড়ির সদস্যের এই আচরণ বিজেপির মতুয়া ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন নিচুতলার কর্মীরা। বিজেপি সমর্থিত মতুয়া সঙ্ঘের সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যা করেছেন, ঠাকুরবাড়ির সদস্য হিসেবে সেটা তাঁকে শোভা পায় না। হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দির সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। জনপ্রতিনিধি হিসেবে অভিষেক সেখানে গিয়েছিলেন। একজন সাংসদ হয়ে নিজের ভিটেতে আসা অপর এক সাংসদের মুখের ওপর মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া মতুয়া সম্প্রদায় ভালোভাবে নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন খোঁজ নেই সার্ভিস রিভলভার ও ১২ রাউন্ড গুলির
মতুয়া মহাসঙ্ঘের নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসু সাফ জানিয়েছেন, ‘শান্তনুর আচরণে ঠাকুর, গোঁসাইরা ছি ছি করছেন। বাইরে থেকে জনা তিরিশেক লেঠেল নিয়ে এসে ঠাকুরবাড়ির মন্দিরে এই অরাজকতা করা হয়েছে। যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিজেপি কর্মীরা ওইদিন অভিষেকের ওপর চড়াও হয়েছিল, সেটাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করা। লোকসভা আর বিধানসভায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেছিল বিজেপি। তাঁরা সেটা বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা অপমানের জবাব ভোটবাক্সেই দেবেন।’ প্রসঙ্গত, নদিয়ার জেলার একতা বড় অংশের বাসিন্দাই মতুয়া। জেলার ১৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে করিমপুর, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণ, চাকদহ, কল্যাণী, হরিণঘাটা এবং শান্তিপুর মূলত মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা। জেলার প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটারই মতুয়া সম্প্রদায়ের। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট আদায়ের ক্ষেত্রে পদ্ম শিবিরের তুরুপের তাস ছিল নাগরিকত্ব ইস্যু। একুশের ভোটে জেলার ১৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতেই জয়ী হয় বিজেপি। তার মধ্যে যেমন ছিল হরিণঘাটা, কল্যাণী, চাকদহ তেমনি ছিল রানাঘাট উত্তর পূর্ব, রানাঘাট উত্তর পশ্চিম ও রানাঘাট দক্ষিণ আসনও। পাশাপাশি ছিল কৃষ্ণগঞ্জ, শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগর উত্তর আসন ৩টিও।
আরও পড়ুন সরকারি কর্মীদের পোষ্যদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে Online-এ জোর
এমনিতেই এখন মতুয়াদের অভিযোগ বিজেপি তাঁদের সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। সেখানে ঠাকুরবাড়ির মন্দিরের স্নানঘাট বাঁধাই, ৫৭টি কমিউনিটি টয়লেট তৈরি, সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে দেওয়ার কাজ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় শান্তনুর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ চড়ছে নদিয়ার মতুয়া মহলে। একুশের বিধানসভায় হারের পরে পুরসভা নির্বাচনে কল্যাণী, গয়েশপুর, হরিণঘাটা, চাকদহ, রানাঘাট, শান্তিপুরে ভাল ফল করার মতো অবস্থায় ছিল বিজেপি। কিন্তু সেই ভাল ফল করা তো দূরের কথা, খাতাটাও খুলতে পারেনি বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিকে মতুয়া ক্ষোভের মুখে পড়ে আরও জমি হারাতে হতে পারে বলেই মনে করছেন গেরুয়া শিবিরেরই নীচুতলার কর্মীরা।