নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজোর মুখে কার্যত বানভাসি হতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের(South Bengal) অন্তত ২টি জেলার মোট ৯টি ব্লক। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ এখনও ছোটনাগপুর মালভূমিতেই অবস্থান করছে। উত্তর ভারতে পশ্চিমী হাওয়া জোরদার হয়ে ওঠায় ওই নিম্নচাপ আর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোতে পারছে না। আর তাই ছোটনাগপুর মালভূমি সহ দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে চলেছে ওই নিম্নচাপ। তার মধ্যে আবার আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামিকাল থেকেই ওই নিম্নচাপ আবার ঘুরে গিয়ে ক্রমশ সরতে শুরু করবে মধ্য বঙ্গের দিকে। তার জেরে এদিন রাত থেকেই মধ্যবঙ্গে বৃষ্টি বাড়বে। বৃহস্পতিবার নিম্নচাপটি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। আর এই টানা বৃষ্টির জন্য Damodar Valley Corporation বা DVC’র জলাধারগুলি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠায় সেখান থেকে দফায় দফায় জল ছাড়া হচ্ছে। সেই জল দুর্গাপুর ব্যারেজ(Durgapur Barrage) হয়ে নেমে আসছে দক্ষিণবঙ্গের দিকে। ইতিমধ্যেই প্রায় ২ লক্ষ কিউসেক জল(2 Lakh Cusecs of Water) ছাড়া হয়েছে দুর্গাপুর থেকে।
গতকাল অর্থাৎ সোমবার থেকেই DVC’র অধীনস্থ মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু হয়। দুটি জলাধার থেকে সব মিলিয়ে ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয় গতকাল। সেই জল দুর্গাপুর ব্যারেজে রাতের মধ্যেই চলে আসে। আর তার জেরে দুর্গাপুর জলাধার থেকেও জল ছাড়া শুরু হয়। মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত দুর্গাপুর জলাধার থেকে মোট ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৭৫ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। একই সঙ্গে এদিন বেলা ১১টা থেকে ফের নতুন করে জল ছাড়া হচ্ছে মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে। মাইথন থেকে ৩০ হাজার এবং পাঞ্চেত থেকে ৬০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। অর্থাৎ ২টি জলাধার থেকে মোট ৯০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এদিন রাতের মধ্যেই সেই জল দুর্গাপুর জলাধারে ঢুকে পড়বে। যার জেরে দুর্গাপুর জলাধার থেকে এদিন রাতে ফের জল ছাড়া হবে। সব মিলিয়ে দুর্গাপুর জলাধার থেকে ২ লক্ষ কিউসেকের থেকেও বেশি জল দামোদর হয়ে নেমে আসছে দক্ষিণবঙ্গের হুগলি জেলার(Hooghly District) আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকে এবং হাওড়া জেলার(Howrah District) উলুবেড়িয়া মহকুমার ৩টি ব্লকের দিকে।
জল ছাড়া নিয়ে সোমবারই হলুদ সর্তকতা জারি করা হয়েছিল DVC’র পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার সকালেও জানা যায় যে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া অব্যাহত রয়েছে। যদি বৃষ্টি পড়ার পরিমাণ বাড়ে সেক্ষেত্রে ফের জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে বলে DVC’র তরফে জানানো হয়েছে। এমনিতেই ২ লক্ষ কিউসেক জল হাওড়া ও হুগলি জেলার ৯টি ব্লকের দিকে ধেয়ে আসছে। এর পরেও যদি আরও জল ছাড়া হয় তাহলে এই ৯টি ব্লকের পরিস্থতি যে খুবই খারাপ হয়ে পড়বে সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে অজয়, ময়ূরাক্ষী, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা, দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী, শিলাবতীর জলাধারগুলি থেকে খুব বেশি জল না ছাড়ায় এখনও পর্যন্ত বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান ও দুই মেদিনীপুর জেলায় বানভাসি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে ঝাড়খণ্ডের সুবর্ণরেখা নদীর ওপর থাকা গালুডি জলাধার থেকে ৩ দফায় মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার ৩৩৮ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। তার জেরে ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।